الترجمة البنغالية
ترجمة معاني القرآن الكريم للغة البنغالية ترجمها د. أبو بكر محمد زكريا، نشرها مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف بالمدينة المنورة. عام الطبعة 1436هـ.﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْمُبِينِ﴾
আলিফ-লাম-রা; এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত [১]।
﴿إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ﴾
নিশ্চয় আমরা এটা নাযিল করেছি [১] কুরআন হিসেবে আরবি ভাষায় যাতে তোমরা বুঝতে পারো [২]।
﴿نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ أَحْسَنَ الْقَصَصِ بِمَا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ هَٰذَا الْقُرْآنَ وَإِنْ كُنْتَ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الْغَافِلِينَ﴾
আমরা আপনার কাছে উত্তম কাহিনি বর্ণনা করছি [১] , ওহীর মাধ্যমে আপনার কাছে এ কুরআন পাঠিয়ে; যদিও এর আগে আপনি ছিলেন অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত [২]
﴿إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ﴾
স্মরণ করুন, যখন ‘ইউসুফ তার পিতাকে বলেছিলেন, ‘ হে আমার পিতা ! আমি তো দেখেছি এগার নক্ষত্র , সূর্য এবং চাঁদকে, দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজ্দাবনত অবস্থায় [১]।
﴿قَالَ يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَىٰ إِخْوَتِكَ فَيَكِيدُوا لَكَ كَيْدًا ۖ إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُبِينٌ﴾
তিনি বললেন, ‘হে আমার বৎস ! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বলো না [১] ; বললে তাঁরা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করবে [২]। শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু [৩]।
﴿وَكَذَٰلِكَ يَجْتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِنْ تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَىٰ آلِ يَعْقُوبَ كَمَا أَتَمَّهَا عَلَىٰ أَبَوَيْكَ مِنْ قَبْلُ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾
আর এভাবে আপনার রব আপনাকে মনোনীত করবেন এবং আপনাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা [১] শিক্ষা দেবেন [২] এবং আপনার প্রতি ও ইয়া’কুবের পরিবার পরিজনদের উপর তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন [৩] , যেভাবে তিনি এটা আগে পূর্ণ করেছিলেন আপনার পিতৃ-পুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের উপর [৪]। নিশ্চয় আপনার রব সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় [৫]।
﴿۞ لَقَدْ كَانَ فِي يُوسُفَ وَإِخْوَتِهِ آيَاتٌ لِلسَّائِلِينَ﴾
অবশ্যই ইউসুফ এবং তাঁর ভাইদের [১] ঘটনায় জিজ্ঞাসুদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে [২]।
﴿إِذْ قَالُوا لَيُوسُفُ وَأَخُوهُ أَحَبُّ إِلَىٰ أَبِينَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّ أَبَانَا لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ﴾
স্মরণ করুন, তারা বলেছিল, ‘ আমাদের পিতার কাছে ইউসুফ এবং তার ভাই তো আমাদের চেয়ে বেশী প্রিয়, অথচ আমরা একটি সংহত দল; আমাদের পিতা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই আছে [১]।
﴿اقْتُلُوا يُوسُفَ أَوِ اطْرَحُوهُ أَرْضًا يَخْلُ لَكُمْ وَجْهُ أَبِيكُمْ وَتَكُونُوا مِنْ بَعْدِهِ قَوْمًا صَالِحِينَ﴾
‘তোমরা ইউসুফকে হত্যা কর অথবা কোন স্থানে তাকে ফেলে আস, তাহলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি শুধু তোমাদের দিকেই নিবিষ্ট হবে এবং তারপর তোমরা ভাল লোক হয়ে যাবে [১]।‘
﴿قَالَ قَائِلٌ مِنْهُمْ لَا تَقْتُلُوا يُوسُفَ وَأَلْقُوهُ فِي غَيَابَتِ الْجُبِّ يَلْتَقِطْهُ بَعْضُ السَّيَّارَةِ إِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِينَ﴾
তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘তোমরা ইউসুফকে হত্যা করো না এবং যদি কিছু করতেই চাও তবে তাকে কোন কূপের গভীরে নিক্ষেপ কর, যত্রীদলের কেউ তাকে তুলে নিয়ে যাবে [১]।’
﴿قَالُوا يَا أَبَانَا مَا لَكَ لَا تَأْمَنَّا عَلَىٰ يُوسُفَ وَإِنَّا لَهُ لَنَاصِحُونَ﴾
তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আপনার কি হলো যে, ইউসুফের ব্যাপারে আপনি আমাদেরকে নিরাপদ মনে করছেন না, অথচ আমরা তো তার শুভাকাঙ্ক্ষী?
﴿أَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا يَرْتَعْ وَيَلْعَبْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ﴾
‘আপনি আগামী কাল তাকে আমাদের সাথে পাঠান, সে সানন্দে ঘোরাফেরা করবে ও খেলাধুলা করবে [১]। আর আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণকারী হব।’
﴿قَالَ إِنِّي لَيَحْزُنُنِي أَنْ تَذْهَبُوا بِهِ وَأَخَافُ أَنْ يَأْكُلَهُ الذِّئْبُ وَأَنْتُمْ عَنْهُ غَافِلُونَ﴾
তিনি বললেন, ‘এটা আমাকে অবশ্যই কষ্ট দেবে যে তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমি আশংকা করি তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলবে, আর তোমরা তার প্রতি অমনোযোগী থাকবে।’
﴿قَالُوا لَئِنْ أَكَلَهُ الذِّئْبُ وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّا إِذًا لَخَاسِرُونَ﴾
তারা বলল, ‘আমরা একটি সংহত দল হওয়া সত্ত্বেও যদি তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলে, তবে তো আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত।’
﴿فَلَمَّا ذَهَبُوا بِهِ وَأَجْمَعُوا أَنْ يَجْعَلُوهُ فِي غَيَابَتِ الْجُبِّ ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِ لَتُنَبِّئَنَّهُمْ بِأَمْرِهِمْ هَٰذَا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾
অতঃপর তারা যখন তাকে নিয়ে গেল এবং কূপের গভীরে নিক্ষেপ করতে একমত হল, আর এ অবস্থায় আমরা তাকে জানিয়ে দিলাম, ‘তুমি তাদেরকে এ কাজের কথা অবশ্যই বলে দেবে’; অথচ তারা তা উপলব্ধি করতে পারবে না [১]।
﴿وَجَاءُوا أَبَاهُمْ عِشَاءً يَبْكُونَ﴾
আর তারা রাতের প্রথম প্রহরে কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার কাছে আসল।
﴿قَالُوا يَا أَبَانَا إِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوسُفَ عِنْدَ مَتَاعِنَا فَأَكَلَهُ الذِّئْبُ ۖ وَمَا أَنْتَ بِمُؤْمِنٍ لَنَا وَلَوْ كُنَّا صَادِقِينَ﴾
তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম [১] এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম, অতঃপর নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না যদিও আমরা সত্যবাদী হই।’
﴿وَجَاءُوا عَلَىٰ قَمِيصِهِ بِدَمٍ كَذِبٍ ۚ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنْفُسُكُمْ أَمْرًا ۖ فَصَبْرٌ جَمِيلٌ ۖ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ﴾
আর তারা তার জামায় মিথ্যা রক্ত লেপন করে এনেছিল। তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে। কাজেই উত্তম ধৈর্যই আমি গ্রহণ করব। আর তোমরা যা বর্ণনা করছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ্ই আমার সাহায্যস্থল [১]।
﴿وَجَاءَتْ سَيَّارَةٌ فَأَرْسَلُوا وَارِدَهُمْ فَأَدْلَىٰ دَلْوَهُ ۖ قَالَ يَا بُشْرَىٰ هَٰذَا غُلَامٌ ۚ وَأَسَرُّوهُ بِضَاعَةً ۚ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِمَا يَعْمَلُونَ﴾
আর এক দল যাত্রীদল আসল, অতঃপর তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে পাঠালে সে তার পানির বালতি নামিয়ে দিল। সে বলে উঠল। ‘কি সুখবর! এ যে এক কিশোর! [১] এবং তারা তাকে পণ্যরূপে লুকিয়ে রাখল [২]। আর তারা যা করেছিল সে বিষয়ে আল্লাহ্ সবিশেষ অবগত [৩]।
﴿وَشَرَوْهُ بِثَمَنٍ بَخْسٍ دَرَاهِمَ مَعْدُودَةٍ وَكَانُوا فِيهِ مِنَ الزَّاهِدِينَ﴾
আর তারা তাকে বিক্রি করল স্বল্প মূল্যে, মাত্র কয়েক দিরহামের বিনিময়ে [১] এবং তারা ছিল তার ব্যাপারে অনাগ্রহী [২]।
﴿وَقَالَ الَّذِي اشْتَرَاهُ مِنْ مِصْرَ لِامْرَأَتِهِ أَكْرِمِي مَثْوَاهُ عَسَىٰ أَنْ يَنْفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ وَلَدًا ۚ وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِي الْأَرْضِ وَلِنُعَلِّمَهُ مِنْ تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ ۚ وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾
আর মিসরের যে ব্যক্তি তাকে কিনেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, ‘এর থাকার সম্মানজনক ব্যবস্থা কর, সম্ভবত সে আমাদের উপকারে আসবে বা আমরা একে পুত্ররূপেও গ্রহণ করতে পারি [১]।‘ আর এভাবেই আমরা ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম [২]; এবং যাতে আমরা তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেই [৩]। আর আল্লাহ্ তাঁর কাজ সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না [৪]।
﴿وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ﴾
আর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল তখন আমরা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম [১]। আর এভাবেই আমরা ইহসানকারীদেরকে পুরস্কৃত করি [২]।
﴿وَرَاوَدَتْهُ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتِهَا عَنْ نَفْسِهِ وَغَلَّقَتِ الْأَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ ۚ قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ ۖ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ﴾
আর তিনি যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিলেন সে তাকে কুপ্ররোচনা দিল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল, আর বলল, ‘আস [১]।‘ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহ্র আশয় প্রার্থনা করছি [২], নিশ্চয় তিনি আমার মনিব; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় যালিমরা সফলকাম হয় না [৩]।’
﴿وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ ۖ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَنْ رَأَىٰ بُرْهَانَ رَبِّهِ ۚ كَذَٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ ۚ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ﴾
আর সে মহিলা তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং তিনিও তার প্রতি আসক্ত [১] হয়ে পড়তেন যদি না তিনি তার রবের নিদর্শন দেখতে পেতেন [২]। এভাবেই (তা হয়েছিল), যাতে আমরা তার থেকে মন্দকাজ ও অশ্লীলতা দূর করে দেই [৩]। তিনি তো ছিলেন আমাদের মুখলিস বা বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
﴿وَاسْتَبَقَا الْبَابَ وَقَدَّتْ قَمِيصَهُ مِنْ دُبُرٍ وَأَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَى الْبَابِ ۚ قَالَتْ مَا جَزَاءُ مَنْ أَرَادَ بِأَهْلِكَ سُوءًا إِلَّا أَنْ يُسْجَنَ أَوْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
আর তারা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল, আর তারা দু’জন স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। স্ত্রীলোকটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে মন্দ কাজ করার ইচ্ছা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ছাড়া আর কি দণ্ড হতে পারে?’
﴿قَالَ هِيَ رَاوَدَتْنِي عَنْ نَفْسِي ۚ وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِنْ أَهْلِهَا إِنْ كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِنْ قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾
ইউসুফ বললেন, ‘সে-ই আমাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছে।’ আর স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, ‘যদি তার জামা সামনের দিকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং সে পুরুষটি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
﴿وَإِنْ كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَهُوَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
আর তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং সে পুরুষটি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।’
﴿فَلَمَّا رَأَىٰ قَمِيصَهُ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ قَالَ إِنَّهُ مِنْ كَيْدِكُنَّ ۖ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ﴾
অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, ‘নিশ্চয় এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ [১]।
﴿يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَٰذَا ۚ وَاسْتَغْفِرِي لِذَنْبِكِ ۖ إِنَّكِ كُنْتِ مِنَ الْخَاطِئِينَ﴾
‘হে ইউসুফ! তুমি এটা উপেক্ষা কর এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর; তুমি তুমিই তো অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত [১]।’
﴿۞ وَقَالَ نِسْوَةٌ فِي الْمَدِينَةِ امْرَأَتُ الْعَزِيزِ تُرَاوِدُ فَتَاهَا عَنْ نَفْسِهِ ۖ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا ۖ إِنَّا لَنَرَاهَا فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ﴾
আর নগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তাঁর যুবক দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মন্ত করছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যেই নিপতিত দেখছি।’
﴿فَلَمَّا سَمِعَتْ بِمَكْرِهِنَّ أَرْسَلَتْ إِلَيْهِنَّ وَأَعْتَدَتْ لَهُنَّ مُتَّكَأً وَآتَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ سِكِّينًا وَقَالَتِ اخْرُجْ عَلَيْهِنَّ ۖ فَلَمَّا رَأَيْنَهُ أَكْبَرْنَهُ وَقَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ وَقُلْنَ حَاشَ لِلَّهِ مَا هَٰذَا بَشَرًا إِنْ هَٰذَا إِلَّا مَلَكٌ كَرِيمٌ﴾
অতঃপর স্ত্রীলোকটি যখন তাদের ষড়যন্ত্রের কথা শুনল তখন সে তাদেরকে ডেকে পাঠাল [১] এবং তাদের জন্য আসন প্রস্তুত করল। আর তাদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিল এবং ইউসুফকে বলল, ‘তাদের সামনে বের হও।’ অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল তখন তারা তার সৌন্দর্যে অভিভূত হল [২] ও নিজেদের হাত কেটে ফেলল এবং তারা বলল, ‘ অদ্ভুত আল্লাহ্র মাহাত্ম্য ! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশ্তা [৩]।’
﴿قَالَتْ فَذَٰلِكُنَّ الَّذِي لُمْتُنَّنِي فِيهِ ۖ وَلَقَدْ رَاوَدْتُهُ عَنْ نَفْسِهِ فَاسْتَعْصَمَ ۖ وَلَئِنْ لَمْ يَفْعَلْ مَا آمُرُهُ لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُونًا مِنَ الصَّاغِرِينَ﴾
সে বলল, ‘এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎ কাজ কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আর আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে , তবে সে অবশ্যই অবশ্যই সে হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে [১]।’
﴿قَالَ رَبِّ السِّجْنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِي إِلَيْهِ ۖ وَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّي كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُنْ مِنَ الْجَاهِلِينَ﴾
ইউসুফ বললেন, ‘হে আমার রব ! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশী প্রিয়। আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব [১]।’
﴿فَاسْتَجَابَ لَهُ رَبُّهُ فَصَرَفَ عَنْهُ كَيْدَهُنَّ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ﴾
সুতরাং তার রব তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে তাদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
﴿ثُمَّ بَدَا لَهُمْ مِنْ بَعْدِ مَا رَأَوُا الْآيَاتِ لَيَسْجُنُنَّهُ حَتَّىٰ حِينٍ﴾
তারপর বিভিন্ন নিদর্শনাবলী দেখার পর তাদের মনে হল যে, তাকে অবশ্যই কিছু কালের জন্য কারারুদ্ধ করতে হবে।
﴿وَدَخَلَ مَعَهُ السِّجْنَ فَتَيَانِ ۖ قَالَ أَحَدُهُمَا إِنِّي أَرَانِي أَعْصِرُ خَمْرًا ۖ وَقَالَ الْآخَرُ إِنِّي أَرَانِي أَحْمِلُ فَوْقَ رَأْسِي خُبْزًا تَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْهُ ۖ نَبِّئْنَا بِتَأْوِيلِهِ ۖ إِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ﴾
আর তার সাথে দুই যুবক কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে আমাকে দেখলাম, আমি মদের জন্য আঙুর নিংড়াচ্ছি,’ এবং অন্যজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে আমাকে দেখলাম, আমি আমার মাথায় রুটি বহন করছি এবং পাখি তা থেকে খাচ্ছে। আমাদেরকে আপনি এটার তাৎপর্য জানিয়ে দিন, আমরা তো আপনাকে মুহসিনদের অন্তর্ভুক্ত দেখেছি [১]
﴿قَالَ لَا يَأْتِيكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهِ إِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيلِهِ قَبْلَ أَنْ يَأْتِيَكُمَا ۚ ذَٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِي رَبِّي ۚ إِنِّي تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ﴾
ইউসুফ বললেন, ‘তোমাদেরকে যে খাদ্য দেয়া হয় তা আসার আগে আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের তাৎপর্য জানিয়ে দেব [১]। আমি যা তোমাদেরকে বলব তা, আমার রব আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে বলব। নিশ্চয় আমি বর্জন করেছি সে সম্প্রদায়ের ধর্মমত যারা আল্লাহ্র উপর ঈমান আনে না। আর যারা আখিরাতের সাথে কুফরীকারী’।
﴿وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ آبَائِي إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۚ مَا كَانَ لَنَا أَنْ نُشْرِكَ بِاللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ﴾
‘আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইস্হাক এবং ইয়া’কূবের মিল্লাত অনুসরণ করি। আল্লাহ্র সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের জন্য সংগত নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
﴿يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾
'হে আমার কারা-সঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু রব উত্তম, না মহাপ্রতাপশালী এক আল্লাহ্?
﴿مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾
‘তাঁকে ছেড়ে তোমরা শুধু কতগুলো নামের ‘ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ; এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ্ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার শুধু মাত্র আল্লাহ্রই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শুধু তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদাত না করতে, এটাই শাশ্বত দ্বীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না [১]।
﴿يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَمَّا أَحَدُكُمَا فَيَسْقِي رَبَّهُ خَمْرًا ۖ وَأَمَّا الْآخَرُ فَيُصْلَبُ فَتَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْ رَأْسِهِ ۚ قُضِيَ الْأَمْرُ الَّذِي فِيهِ تَسْتَفْتِيَانِ﴾
‘হে আমার কারা-সঙ্গীদ্বয়! তোমাদের দুজনের একজন তার মনিবকে মদ পান করাবে [১] এবং অন্যজন [২] শূলবিদ্ধ হবে; অতঃপর তার মস্তক হতে পাখি খাবে। যে বিষয়ে তোমরা জানতে চেয়েছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে [৩]।’
﴿وَقَالَ لِلَّذِي ظَنَّ أَنَّهُ نَاجٍ مِنْهُمَا اذْكُرْنِي عِنْدَ رَبِّكَ فَأَنْسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهِ فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِينَ﴾
আর ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করলেন, তাকে বললেন, ‘তোমার মনিবের কাছে আমার কথা বলো’, কিন্তু শয়তান তাকে তার মনিবের কাছে তার বিষয় বলার কথা ভুলিয়ে দিল; কাজেই ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে রয়ে গেলেন [১]।
﴿وَقَالَ الْمَلِكُ إِنِّي أَرَىٰ سَبْعَ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعَ سُنْبُلَاتٍ خُضْرٍ وَأُخَرَ يَابِسَاتٍ ۖ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَفْتُونِي فِي رُؤْيَايَ إِنْ كُنْتُمْ لِلرُّؤْيَا تَعْبُرُونَ﴾
আর রাজা বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি মোটাতাজা গাভী, তাদেরকে সাতটি দুর্বল গাভী খেয়ে ফেলছে এবং দেখলাম সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক। হে সভাষদগণ! যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার তবে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে অভিমত দাও।’
﴿قَالُوا أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ ۖ وَمَا نَحْنُ بِتَأْوِيلِ الْأَحْلَامِ بِعَالِمِينَ﴾
তারা বলল, ‘এটা অর্থহীন স্বপ্ন এবং আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ নই [১]।’
﴿وَقَالَ الَّذِي نَجَا مِنْهُمَا وَادَّكَرَ بَعْدَ أُمَّةٍ أَنَا أُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيلِهِ فَأَرْسِلُونِ﴾
আর সে দুজন কারারুদ্ধের মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পরে যার স্মরণ হল সে বলল, ‘আমি এর তাৎপর্য তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। কাজেই তোমরা আমাকে পাঠাও [১]।’
﴿يُوسُفُ أَيُّهَا الصِّدِّيقُ أَفْتِنَا فِي سَبْعِ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعِ سُنْبُلَاتٍ خُضْرٍ وَأُخَرَ يَابِسَاتٍ لَعَلِّي أَرْجِعُ إِلَى النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَعْلَمُونَ﴾
সে বলল, ‘হে ইউসুফ ! সত্যবাদী [১] ! সাতটি মোটাতাজা গাভী, সেগুলোকে সাতটি দুর্বল গাভী খেয়ে ফেলছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ সম্বন্ধে আপনি আমাদেরকে ব্যাখ্যা দিন [২], যাতে আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারি ও তারা জানতে পারে [৩]।’
﴿قَالَ تَزْرَعُونَ سَبْعَ سِنِينَ دَأَبًا فَمَا حَصَدْتُمْ فَذَرُوهُ فِي سُنْبُلِهِ إِلَّا قَلِيلًا مِمَّا تَأْكُلُونَ﴾
ইউসুফ বললেন, ‘তোমরা সাত বছর একাধারে চাষ করবে, অতঃপর তোমরা যে শস্য কাটবে তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা খাবে, তা ছাড়া বাকী সবগুলো শীষসহ রেখে দেবে;
﴿ثُمَّ يَأْتِي مِنْ بَعْدِ ذَٰلِكَ سَبْعٌ شِدَادٌ يَأْكُلْنَ مَا قَدَّمْتُمْ لَهُنَّ إِلَّا قَلِيلًا مِمَّا تُحْصِنُونَ﴾
‘এরপর আসবে সাতটি কঠিন বছর [১], এ সাত বছর, যা আগে সঞ্চয় করে রাখবে, লোকেরা তা খাবে; শুধুমাত্র সামান্য কিছু যা তোমরা সংরক্ষণ করবে, তা ছাড়া [২] ।
﴿ثُمَّ يَأْتِي مِنْ بَعْدِ ذَٰلِكَ عَامٌ فِيهِ يُغَاثُ النَّاسُ وَفِيهِ يَعْصِرُونَ﴾
‘তারপর আসবে এক বছর, সে বছর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সে বছর মানুষ ফলের রস নিংড়াবে [১] ।’
﴿وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُ الرَّسُولُ قَالَ ارْجِعْ إِلَىٰ رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ اللَّاتِي قَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ ۚ إِنَّ رَبِّي بِكَيْدِهِنَّ عَلِيمٌ﴾
আর রাজা বলল, ‘তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে আস [১]।’ অতঃপর যখন দূত তার কাছে উপস্থিত হল তখন তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার মনিবের কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস কর, যে নারীরা হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কি! নিশ্চয় আমার রব তাদের ছলনা সম্পর্কে সম্যক অবগত [২]।’
﴿قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ إِذْ رَاوَدْتُنَّ يُوسُفَ عَنْ نَفْسِهِ ۚ قُلْنَ حَاشَ لِلَّهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ مِنْ سُوءٍ ۚ قَالَتِ امْرَأَتُ الْعَزِيزِ الْآنَ حَصْحَصَ الْحَقُّ أَنَا رَاوَدْتُهُ عَنْ نَفْسِهِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الصَّادِقِينَ﴾
রাজা নারীদেরকে বলল, ‘যখন তোমরা ইউসুফ থেকে অসৎকাজ কামনা করেছিলে, তখন তোমাদের কি হয়েছিল?’ তারা বলল, 'অদ্ভুত আল্লাহ্র মাহাত্ম্য! আমরা তার মধ্যে কোন দোষ দেখিনি।’ আযীযের স্ত্রী বলল, ‘এতদিনে সত্য প্রকাশ হল, আমিই তাকে প্ররোচনা দিয়েছিলাম, আর সে তো অবশ্যই সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।’
﴿ذَٰلِكَ لِيَعْلَمَ أَنِّي لَمْ أَخُنْهُ بِالْغَيْبِ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي كَيْدَ الْخَائِنِينَ﴾
এটা এ জন্যে যে, যাতে সে জানতে পারে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং নিশ্চয় আল্লাহ্ বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল করেন না।’
﴿۞ وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَحِيمٌ﴾
আর আমি নিজকে নির্দোষ মনে করিনা, কেননা, নিশ্চয় মানুষের নাফস খারাপ কাজের নির্দেশ দিয়েই থাকে [১], কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার রব দয়া করেন [২]। নিশ্চয় আমার রব অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
﴿وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ أَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِي ۖ فَلَمَّا كَلَّمَهُ قَالَ إِنَّكَ الْيَوْمَ لَدَيْنَا مَكِينٌ أَمِينٌ﴾
আর রাজা বলল, ‘ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে আস; আমি তাকে আমার নিজের জন্য আপন করে নেব।’ তারপর রাজা যখন তার সাথে কথা বলল, তখন রাজা বলল, ‘আজ আপনি তো আমাদের কাছে মর্যাদাশীল, আস্থাভাজন [১]।’
﴿قَالَ اجْعَلْنِي عَلَىٰ خَزَائِنِ الْأَرْضِ ۖ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ﴾
ইউসুফ বললেন, ‘আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন; আমি তো উত্তম রক্ষক, সুবিজ্ঞ।’
﴿وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِي الْأَرْضِ يَتَبَوَّأُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَاءُ ۚ نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَنْ نَشَاءُ ۖ وَلَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ﴾
আর এভাবে ইউসুফকে আমরা সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম; সে দেশে তিনি যেখানে ইচ্ছে অবস্থান করতে পারতেন। আমরা যাকে ইচ্ছে তার প্রতি আমাদের রহমত দান করি; এবং আমরা মুহসিনদের পুরস্কার নষ্ট করি না [১]।
﴿وَلَأَجْرُ الْآخِرَةِ خَيْرٌ لِلَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ﴾
আর যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের পুরস্কারই উত্তম [১]।
﴿وَجَاءَ إِخْوَةُ يُوسُفَ فَدَخَلُوا عَلَيْهِ فَعَرَفَهُمْ وَهُمْ لَهُ مُنْكِرُونَ﴾
আর [১] ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার কাছে প্রবেশ করল [২]। অতঃপর তিনি তাদেরকে চিনলেন, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না।
﴿وَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ قَالَ ائْتُونِي بِأَخٍ لَكُمْ مِنْ أَبِيكُمْ ۚ أَلَا تَرَوْنَ أَنِّي أُوفِي الْكَيْلَ وَأَنَا خَيْرُ الْمُنْزِلِينَ﴾
আর তিনি যখন তাদেরকে তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিলেন তখন তিনি বললেন [১], ‘তোমরা আমার কাছে তোমাদের পিতার পক্ষ থেকে বৈমাত্রেয় ভাইকে নিয়ে আস [২]। তোমরা কি দেখছ না যে, আমি মাপে পূর্ণ মাত্রায় দেই এবং আমি উত্তম অতিথিপরায়ণ [৩]।
﴿فَإِنْ لَمْ تَأْتُونِي بِهِ فَلَا كَيْلَ لَكُمْ عِنْدِي وَلَا تَقْرَبُونِ﴾
‘কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার কাছে না নিয়ে আস তবে আমার কাছে তোমাদের জন্য কোন বরাদ্দ থাকবে না এবং তোমরা আমার ধারে-কাছেও আসবে না।
﴿قَالُوا سَنُرَاوِدُ عَنْهُ أَبَاهُ وَإِنَّا لَفَاعِلُونَ﴾
তারা বলল, ‘তার ব্যাপারে আমরা তার পিতাকে সম্মত করানোর চেষ্টা করব এবং আমরা নিশ্চয়ই এটা করব।’
﴿وَقَالَ لِفِتْيَانِهِ اجْعَلُوا بِضَاعَتَهُمْ فِي رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَعْرِفُونَهَا إِذَا انْقَلَبُوا إِلَىٰ أَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
ইউসুফ তাঁর কর্মচারীদেরকে বললেন, ‘তারা যে পণ্যমূল্য দিয়েছে তা তাদের মালপত্রের মধ্যে রেখে দাও, যাতে স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার পর তারা তা চিনতে পারে, যাতে তারা আবার ফিরে আসে [১]।’
﴿فَلَمَّا رَجَعُوا إِلَىٰ أَبِيهِمْ قَالُوا يَا أَبَانَا مُنِعَ مِنَّا الْكَيْلُ فَأَرْسِلْ مَعَنَا أَخَانَا نَكْتَلْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ﴾
অতঃপর তারা যখন তাদের পিতার কাছে ফিরে আসল, তখন তারা বলল, 'হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য বরাদ্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কাজেই আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন যাতে আমরা পরিমাপ করে রসদ পেতে পারি। আর আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণকারী।’
﴿قَالَ هَلْ آمَنُكُمْ عَلَيْهِ إِلَّا كَمَا أَمِنْتُكُمْ عَلَىٰ أَخِيهِ مِنْ قَبْلُ ۖ فَاللَّهُ خَيْرٌ حَافِظًا ۖ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ﴾
তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে তার সম্বন্ধে সেরূপ নিরাপদ মনে করব, যেরূপ আগে নিরাপদ মনে করেছিলাম তোমাদেরকে তার ভাই সম্বন্ধে? তবে আল্লাহ্ই রক্ষণাবেক্ষণে শ্ৰেষ্ঠ এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু [১]।’
﴿وَلَمَّا فَتَحُوا مَتَاعَهُمْ وَجَدُوا بِضَاعَتَهُمْ رُدَّتْ إِلَيْهِمْ ۖ قَالُوا يَا أَبَانَا مَا نَبْغِي ۖ هَٰذِهِ بِضَاعَتُنَا رُدَّتْ إِلَيْنَا ۖ وَنَمِيرُ أَهْلَنَا وَنَحْفَظُ أَخَانَا وَنَزْدَادُ كَيْلَ بَعِيرٍ ۖ ذَٰلِكَ كَيْلٌ يَسِيرٌ﴾
আর যখন তারা তাদের মালপত্র খুলল তখন তারা দেখতে পেল তাদের পণ্যমূল্য তাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে। তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আমরা আর কি প্রত্যাশা করতে পারি? এটা আমাদের দেয়া পণ্যমূল্য, আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর আমরা আমাদের পরিবারবর্গকে খাদ্য-সামগ্রী এনে দেব এবং আমরা আমাদের ভাইয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করব এবং আমরা অতিরিক্ত আরো এক উট বোঝাই পণ্য আনব; ঐ পরিমাণ শস্য অতি সহজ [১]।’
﴿قَالَ لَنْ أُرْسِلَهُ مَعَكُمْ حَتَّىٰ تُؤْتُونِ مَوْثِقًا مِنَ اللَّهِ لَتَأْتُنَّنِي بِهِ إِلَّا أَنْ يُحَاطَ بِكُمْ ۖ فَلَمَّا آتَوْهُ مَوْثِقَهُمْ قَالَ اللَّهُ عَلَىٰ مَا نَقُولُ وَكِيلٌ﴾
পিতা বললেন, ‘আমি তাকে কখনোই তোমাদের সাথে পাঠাবো না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহ্র নামে অঙ্গীকার কর যে, তোমরা তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবেই [১], অবশ্য যদি তোমরা বেষ্টিত হয়ে পড় (তবে ভিন্ন কথা)।’ তারপর যখন তারা তাঁর কাছে প্রতিজ্ঞা করল তখন তিনি বললেন, ‘আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি, আল্লাহ্ তার বিধায়ক [২]।’
﴿وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِنْ بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ۖ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ﴾
আর তিনি বললেন, ‘হে আমার পুত্ৰগণ! তোমরা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে [১]। আল্লাহ্র সিদ্ধান্তের বিপরীতে আমি তোমাদের জন্য কিছু করতে পারি না। হুকুমের মালিক তো আল্লাহ্ই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি। আর আল্লাহ্রই উপর যেন নির্ভরকারীরা নির্ভর করে [২]।’
﴿وَلَمَّا دَخَلُوا مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوهُمْ مَا كَانَ يُغْنِي عَنْهُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا حَاجَةً فِي نَفْسِ يَعْقُوبَ قَضَاهَا ۚ وَإِنَّهُ لَذُو عِلْمٍ لِمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾
আর যখন তারা তাদের পিতা যেভাবে আদেশ করেছিলেন সেভাবেই প্রবেশ করল, তখন আল্লাহ্র হুকুমের বিপরীতে তা তাদের কোন কাজে আসল না; ইয়া’কূব শুধু তার মনের একটি অভিপ্রায় পূর্ণ করছিলেন [১] আর অবশ্যই তিনি আমাদের দেয়া শিক্ষায় জ্ঞানবান ছিলেন। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই জানে না [২] ।
﴿وَلَمَّا دَخَلُوا عَلَىٰ يُوسُفَ آوَىٰ إِلَيْهِ أَخَاهُ ۖ قَالَ إِنِّي أَنَا أَخُوكَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
আর তারা যখন ইউসুফের নিকট প্রবেশ করল, তখন ইউসুফ তার সহোদরকে নিজের কাছে রাখলেন এবং বললেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমার সহোদর, কাজেই তারা যা করত তার জন্য দুঃখ করো না [১]।’
﴿فَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ جَعَلَ السِّقَايَةَ فِي رَحْلِ أَخِيهِ ثُمَّ أَذَّنَ مُؤَذِّنٌ أَيَّتُهَا الْعِيرُ إِنَّكُمْ لَسَارِقُونَ﴾
অতঃপর তিনি যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল, তখন তিনি তার সহোদরের মালপত্রের মধ্যে পানপাত্র [১] রেখে দিলেন [২]। তারপর এক আহ্বায়ক চিৎকার করে বলল, ‘হে যাত্রীদল! তোমরা নিশ্চয় চোর [৩]।’
﴿قَالُوا وَأَقْبَلُوا عَلَيْهِمْ مَاذَا تَفْقِدُونَ﴾
তারা ওদের দিকে চেয়ে বলল, ‘তোমরা কী হারিয়েছ [১]?’
﴿قَالُوا نَفْقِدُ صُوَاعَ الْمَلِكِ وَلِمَنْ جَاءَ بِهِ حِمْلُ بَعِيرٍ وَأَنَا بِهِ زَعِيمٌ﴾
তারা বলল, ‘আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়েছি; যে তা এনে সে এক উট বোঝাই মাল পাবে [১] এবং আমি সেটার জামিন [২]।’
﴿قَالُوا تَاللَّهِ لَقَدْ عَلِمْتُمْ مَا جِئْنَا لِنُفْسِدَ فِي الْأَرْضِ وَمَا كُنَّا سَارِقِينَ﴾
তারা বলল, ‘আল্লাহ্র শপথ! তোমরা তো জান যে, আমরা এ দেশে দুষ্কৃতি করতে আসিনি এবং আমরা চোরও নই [১]।’
﴿قَالُوا فَمَا جَزَاؤُهُ إِنْ كُنْتُمْ كَاذِبِينَ﴾
তারা বলল, ‘যদি তোমরা মিথ্যাবাদী হও তবে তার শাস্তি কী?’
﴿قَالُوا جَزَاؤُهُ مَنْ وُجِدَ فِي رَحْلِهِ فَهُوَ جَزَاؤُهُ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ﴾
তারা বলল, ‘এর শাস্তি যার মালপত্রের মধ্যে পাত্রটি পাওয়া যাবে, সে-ই তার বিনিময়।’ এভাবে আমরা যালেমদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি [১]।
﴿فَبَدَأَ بِأَوْعِيَتِهِمْ قَبْلَ وِعَاءِ أَخِيهِ ثُمَّ اسْتَخْرَجَهَا مِنْ وِعَاءِ أَخِيهِ ۚ كَذَٰلِكَ كِدْنَا لِيُوسُفَ ۖ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِي دِينِ الْمَلِكِ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ ۚ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَنْ نَشَاءُ ۗ وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ﴾
অতঃপর তিনি তার সহোদরের মালপত্র তল্লাশির আগে তাদের মালপত্র তল্লাশি করতে লাগলেন [১], পরে তার সহোদরের মালপত্রের মধ্য হতে পাত্রটি বের করলেন [২]। এভাবে আমরা ইউসুফের জন্য কৌশল করেছিলাম [৩]। রাজার আইনে তার ভাইকে আটক করা সংগত হতোনা, আল্লাহ্ ইচ্ছে না করলে। আমরা যাকে ইচ্ছে মর্যাদায় উন্নীত করি। আর প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির উপর আছে সর্বজ্ঞানী [৪]।
﴿۞ قَالُوا إِنْ يَسْرِقْ فَقَدْ سَرَقَ أَخٌ لَهُ مِنْ قَبْلُ ۚ فَأَسَرَّهَا يُوسُفُ فِي نَفْسِهِ وَلَمْ يُبْدِهَا لَهُمْ ۚ قَالَ أَنْتُمْ شَرٌّ مَكَانًا ۖ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا تَصِفُونَ﴾
তারা বলল, ‘সে যদি চুরি করে থাকে তবে তার সহোদরও তো আগে চুরি করেছিল [১]।’ কিন্তু ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপার নিজের মনে গোপন রাখলেন এবং তাদের কাছে প্রকাশ করলেন না; তিনি (মনে মনে) বললেন, ‘তোমাদের অবস্থা তো হীনতর এবং তোমরা যা বলছ সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ই অধিক অবগত [২]।’
﴿قَالُوا يَا أَيُّهَا الْعَزِيزُ إِنَّ لَهُ أَبًا شَيْخًا كَبِيرًا فَخُذْ أَحَدَنَا مَكَانَهُ ۖ إِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ﴾
তারা বলল, ‘হে ‘আযীয, এর পিতা তো অত্যন্ত বৃদ্ধ; কাজেই এর জায়গায় আপনি আমাদের একজনকে রাখুন। আমরা তো আপনাকে দেখছি মুহসিন ব্যক্তিদের একজন [১]।’
﴿قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ أَنْ نَأْخُذَ إِلَّا مَنْ وَجَدْنَا مَتَاعَنَا عِنْدَهُ إِنَّا إِذًا لَظَالِمُونَ﴾
তিনি বললেন, ‘যার কাছে আমরা আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া অন্যকে রাখার অপরাধ হতে আমরা আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরূপ করলে তো আমরা অবশ্যই যালেম হয়ে যাব [১]।’
﴿فَلَمَّا اسْتَيْأَسُوا مِنْهُ خَلَصُوا نَجِيًّا ۖ قَالَ كَبِيرُهُمْ أَلَمْ تَعْلَمُوا أَنَّ أَبَاكُمْ قَدْ أَخَذَ عَلَيْكُمْ مَوْثِقًا مِنَ اللَّهِ وَمِنْ قَبْلُ مَا فَرَّطْتُمْ فِي يُوسُفَ ۖ فَلَنْ أَبْرَحَ الْأَرْضَ حَتَّىٰ يَأْذَنَ لِي أَبِي أَوْ يَحْكُمَ اللَّهُ لِي ۖ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ﴾
অতঃপর যখন তারা তার [১] ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাশ হল, তখন তারা নির্জনে গিয়ে পরামর্শ করতে লাগল। তাদের মধ্যে বয়সে বড় ব্যক্তিটি বলল, ‘তোমরা কি জান না যে, তোমাদের পিতা তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহ্র নামে অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং আগেও তোমরা ইউসুফের ব্যাপারে অন্যায় করেছিলে। কাজেই আমি কিছুতেই এ দেশ থেকে যাব না যতক্ষন না আমার পিতা আমাকে অনুমতি দেন বা আল্লাহ্ আমার জন্য কোন ফয়সালা করেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।
﴿ارْجِعُوا إِلَىٰ أَبِيكُمْ فَقُولُوا يَا أَبَانَا إِنَّ ابْنَكَ سَرَقَ وَمَا شَهِدْنَا إِلَّا بِمَا عَلِمْنَا وَمَا كُنَّا لِلْغَيْبِ حَافِظِينَ﴾
‘তোমরা তোমাদের পিতার কাছে ফিরে যাও এবং বল, ‘হে আমাদের পিতা! আপনার পুত্র তো চুরি করেছে এবং আমরা যা জানি তারই প্রত্যক্ষ বিবরণ দিলাম [১]। আর আমরা তো গায়েব সংরক্ষণকারী নই [২]।
﴿وَاسْأَلِ الْقَرْيَةَ الَّتِي كُنَّا فِيهَا وَالْعِيرَ الَّتِي أَقْبَلْنَا فِيهَا ۖ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ﴾
‘আর যে জনপদে আমরা ছিলাম সেখানকার অধিবাসীদেরকে জিজ্ঞেস করুন এবং যে যাত্রীদলের সাথে আমরা এসেছি তাদেরকেও। আমরা অবশ্যই সত্য বলছি [১]।’
﴿قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنْفُسُكُمْ أَمْرًا ۖ فَصَبْرٌ جَمِيلٌ ۖ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَأْتِيَنِي بِهِمْ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ﴾
ইয়া’কূব বললেন, ‘না, তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে [১], কাজেই উত্তম ধৈর্য্যই আমি গ্রহণ করব; হয়ত আল্লাহ্ তাদেরকে একসঙ্গে আমার কাছে এনে দেবেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’
﴿وَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا أَسَفَىٰ عَلَىٰ يُوسُفَ وَابْيَضَّتْ عَيْنَاهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ كَظِيمٌ﴾
আর তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, ‘আফসোস ইউসুফের জন্য।’ শোকে তার চোখ দু’টি সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি ছিলেন সংবরণকারী [১]।
﴿قَالُوا تَاللَّهِ تَفْتَأُ تَذْكُرُ يُوسُفَ حَتَّىٰ تَكُونَ حَرَضًا أَوْ تَكُونَ مِنَ الْهَالِكِينَ﴾
তারা বলল, ‘আল্লাহ্র শপথ! আপনি তো ইউসুফের কথা সবসময় স্মরণ করতে থাকবেন যতক্ষণ না আপনি মুমূর্ষ হবেন, বা মারা যাবেন [১]।’
﴿قَالَ إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ وَأَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
তিনি বললেন, ‘আমি আমার অসহনীয় বেদনা, আমার দুঃখ শুধু আল্লাহ্র কাছেই নিবেদন করছি এবং আমি আল্লাহ্র কাছ থেকে তা জানি যা তোমরা জান না [১]।
﴿يَا بَنِيَّ اذْهَبُوا فَتَحَسَّسُوا مِنْ يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلَا تَيْأَسُوا مِنْ رَوْحِ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ﴾
‘হে আমার পুত্ৰগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের সন্ধান কর এবং আল্লাহ্র রহমত হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না। কারণ আল্লাহ্র রহমত হতে কেউই নিরাশ হয় না, কাফির সম্প্রদায় ছাড়া [১]।’
﴿فَلَمَّا دَخَلُوا عَلَيْهِ قَالُوا يَا أَيُّهَا الْعَزِيزُ مَسَّنَا وَأَهْلَنَا الضُّرُّ وَجِئْنَا بِبِضَاعَةٍ مُزْجَاةٍ فَأَوْفِ لَنَا الْكَيْلَ وَتَصَدَّقْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّ اللَّهَ يَجْزِي الْمُتَصَدِّقِينَ﴾
অতঃপর যখন তারা ইউসুফের কাছে উপস্থিত হল তখন তারা বলল, ‘হে ‘আযীয! আমরা ও আমাদের পরিবার-পরিজন বিপন্ন হয়ে পড়েছি এবং আমরা তুচ্ছ পুঁজি নিয়ে এসেছি [১]; আপনি আমাদের রসদ পূর্ণ মাত্রায় দিন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন [২]; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অনুগ্রহকারীদের পুরস্কৃত করেন [৩]।’
﴿قَالَ هَلْ عَلِمْتُمْ مَا فَعَلْتُمْ بِيُوسُفَ وَأَخِيهِ إِذْ أَنْتُمْ جَاهِلُونَ﴾
তিনি বললেন, ‘তোমরা কি জান, তোমরা ইউসুফ ও তার সহোদরের প্রতি কিরূপ আচরণ করেছিলে, যখন তোমরা ছিলে অজ্ঞ [১]?
﴿قَالُوا أَإِنَّكَ لَأَنْتَ يُوسُفُ ۖ قَالَ أَنَا يُوسُفُ وَهَٰذَا أَخِي ۖ قَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا ۖ إِنَّهُ مَنْ يَتَّقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ﴾
তারা বলল, ‘তবে কি তুমিই ইউসুফ?’ তিনি বললেন, ‘আমিই ইউসুফ এবং এ আমার সহোদর; আল্লাহ্ তো আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন [১]। নিশ্চয় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ধৈর্যধারণ করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসিনদের শ্রমফল নষ্ট করেন না [২]।’
﴿قَالُوا تَاللَّهِ لَقَدْ آثَرَكَ اللَّهُ عَلَيْنَا وَإِنْ كُنَّا لَخَاطِئِينَ﴾
তারা বলল, ‘আল্লাহ্র শপথ! আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তোমাকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং আমরা তো অপরাধী ছিলাম।’
﴿قَالَ لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ ۖ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ ۖ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ﴾
তিনি বললেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন ভর্ৎসনা নেই। আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তিনিই শ্ৰেষ্ঠ দয়ালু [১]।
﴿اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَٰذَا فَأَلْقُوهُ عَلَىٰ وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا وَأْتُونِي بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِينَ﴾
তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটা আমার পিতার চেহারার উপর রেখো; তিনি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমাদের পরিবারের সবাইকে আমার কাছে নিয়ে এসো [১]।’
﴿وَلَمَّا فَصَلَتِ الْعِيرُ قَالَ أَبُوهُمْ إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَ ۖ لَوْلَا أَنْ تُفَنِّدُونِ﴾
আর যখন যাত্রীদল বের হয়ে পড়ল তখন তাদের পিতা বললেন, ‘তোমরা যদি আমাকে বৃদ্ধ-অপ্রকৃতস্থ মনে না কর তবে বলি, আমি ইউসুফের ঘ্ৰাণ পাচ্ছি [১]।’
﴿قَالُوا تَاللَّهِ إِنَّكَ لَفِي ضَلَالِكَ الْقَدِيمِ﴾
তারা বলল, ‘আল্লাহ্র শপথ! আপনি তো আপনার পুরোন বিভ্রান্তিতেই রয়েছেন [১]।’
﴿فَلَمَّا أَنْ جَاءَ الْبَشِيرُ أَلْقَاهُ عَلَىٰ وَجْهِهِ فَارْتَدَّ بَصِيرًا ۖ قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
অতঃপর যখন সুসংবাদবাহক উপস্থিত হল এবং তাঁর চেহারার উপর জামাটি রাখল তখন তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন [১]। তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আল্লাহ্র কাছ থেকে যা জানি তা তোমরা জান না?’
﴿قَالُوا يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِينَ﴾
তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন; আমরা তো অপরাধী [১]।’
﴿قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي ۖ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ﴾
তিনি বললেন, ‘অচিরেই আমি আমার রবের কাছে তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
﴿فَلَمَّا دَخَلُوا عَلَىٰ يُوسُفَ آوَىٰ إِلَيْهِ أَبَوَيْهِ وَقَالَ ادْخُلُوا مِصْرَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ آمِنِينَ﴾
অতঃপর তারা যখন ইউসুফের কাছে উপস্থিত হল, তখন তিনি তার পিতা-মাতাকে নিজের কাছে স্থান দিলেন এবং বললেন, ‘আপনারা আল্লাহ্র ইচ্ছায় নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন [১]।’
﴿وَرَفَعَ أَبَوَيْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَخَرُّوا لَهُ سُجَّدًا ۖ وَقَالَ يَا أَبَتِ هَٰذَا تَأْوِيلُ رُؤْيَايَ مِنْ قَبْلُ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّي حَقًّا ۖ وَقَدْ أَحْسَنَ بِي إِذْ أَخْرَجَنِي مِنَ السِّجْنِ وَجَاءَ بِكُمْ مِنَ الْبَدْوِ مِنْ بَعْدِ أَنْ نَزَغَ الشَّيْطَانُ بَيْنِي وَبَيْنَ إِخْوَتِي ۚ إِنَّ رَبِّي لَطِيفٌ لِمَا يَشَاءُ ۚ إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ﴾
আর ইউসুফ তার পিতা-মাতাকে [১] উঁচু আসনে বসালেন এবং তারা সবাই তার সম্মানে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল [২]। তিনি বললেন, ‘হে আমার পিতা! এটাই আমার আগেকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা [৩]; আমার রব এটা সত্যে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেন এবং শয়তান আমার ও আমার ভাইদের সম্পর্ক নষ্ট করার পরও আপনাদেরকে মরু অঞ্চল হতে এখানে এনে দিয়ে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আমার রব যা ইচ্ছে তা নিপুণতার সাথে করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় [৪]।’
﴿۞ رَبِّ قَدْ آتَيْتَنِي مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِي مِنْ تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ ۚ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَنْتَ وَلِيِّي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ﴾
‘হে আমার রব! আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের সষ্টা! আপনিই দুনিয়া ও আখিরাতে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন [১]।’
﴿ذَٰلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۖ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوا أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ﴾
এটা গায়েবের সংবাদ যা আপনাক আমরা ওহী দ্বারা জানাচ্ছি [১]; ষড়যন্ত্র কালে যখন তারা মতৈক্যে পৌঁছেছিল, তখন আপনি তাদের সাথে ছিলেন না [২]।
﴿وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ﴾
আর আপনি যতই চান না কেন, বেশীর ভাগ লোকই ঈমান গ্রহণকারী নয় [১]।
﴿وَمَا تَسْأَلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ﴾
আর আপনি তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক দাবি করছেন না। এ (কুরআন) তো সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশ ছাড়া কিছু নয়।
﴿وَكَأَيِّنْ مِنْ آيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ﴾
আর আসমান ও যমীনে অনেক নিদর্শন রয়েছে; তারা এ সবকিছু দেখে, কিন্তু তারা এসবের প্রতি উদাসীন।
﴿وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ﴾
তাদের বেশীর ভাগই আল্লাহ্র উপর ঈমান রাখে, তবে তাঁর সাথে (ইবাদতে) শির্ক করা অবস্থায় [১]।
﴿أَفَأَمِنُوا أَنْ تَأْتِيَهُمْ غَاشِيَةٌ مِنْ عَذَابِ اللَّهِ أَوْ تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾
তবে কি তারা আল্লাহ্র সর্বগ্রাসী শাস্তি হতে বা তাদের অজান্তে কিয়ামতের আকস্মিক উপস্থিতি হতে নিরাপদ হয়ে গেছে [১]?
﴿قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
বলুন, ‘এটাই আমার পথ, আল্লাহ্র প্রতি মানুষকে আমি ডাকি জেনে-বুঝে, আমি [১] এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও [২]। আর আল্লাহ্ কতই না পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই [৩]।’
﴿وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ مِنْ أَهْلِ الْقُرَىٰ ۗ أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۗ وَلَدَارُ الْآخِرَةِ خَيْرٌ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾
আর আমরা আপনার আগেও জনপদবাসীদের মধ্য থেকে [১] পুরুষদেরকেই পাঠিয়েছিলাম [২], যাদের কাছে ওহী পাঠাতাম। তারা কি যমীনে ভ্রমণ করেনি? ফলে দেখতে পেত তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল? আর অবশ্যই যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই উত্তম [৩]; তবুও কি তোমরা বুঝ না?
﴿حَتَّىٰ إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا جَاءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّيَ مَنْ نَشَاءُ ۖ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ﴾
অবশেষে যখন রাসূলগণ (তাদের সম্প্রদায়ের ঈমান থেকে) নিরাশ হলেন এবং লোকেরা মনে করল যে, রাসূলগণকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে তখন তাদের কাছে আমাদের সাহায্য আসল। এভাবে আমরা যাকে ইচ্ছে করি সে নাজাত পায়। আর অপরাধী সম্পপ্রদায় হতে আমাদের শাস্তি প্রতিরোধ করা হয় না।
﴿لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِأُولِي الْأَلْبَابِ ۗ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَىٰ وَلَٰكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ﴾
তাদের বৃত্তান্তে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা [১]। এটা কোন বানানো রচনা নয়। বরং এটা আগের গ্রন্থে যা আছে তার সত্যায়ন [২] ও সব কিছুর বিশদ বিবরণ, আর যারা ঈমান আনে এমন সম্পপ্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমত।
الترجمات والتفاسير لهذه السورة:
- سورة يوسف : الترجمة الأمهرية አማርኛ - الأمهرية
- سورة يوسف : اللغة العربية - المختصر في تفسير القرآن الكريم العربية - العربية
- سورة يوسف : اللغة العربية - التفسير الميسر العربية - العربية
- سورة يوسف : اللغة العربية - معاني الكلمات العربية - العربية
- سورة يوسف : الترجمة الأسامية অসমীয়া - الأسامية
- سورة يوسف : الترجمة الأذرية Azərbaycanca / آذربايجان - الأذرية
- سورة يوسف : الترجمة البنغالية বাংলা - البنغالية
- سورة يوسف : الترجمة البوسنية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Bosanski - البوسنية
- سورة يوسف : الترجمة البوسنية - كوركت Bosanski - البوسنية
- سورة يوسف : الترجمة البوسنية - ميهانوفيتش Bosanski - البوسنية
- سورة يوسف : الترجمة الألمانية - بوبنهايم Deutsch - الألمانية
- سورة يوسف : الترجمة الألمانية - أبو رضا Deutsch - الألمانية
- سورة يوسف : الترجمة الإنجليزية - صحيح انترناشونال English - الإنجليزية
- سورة يوسف : الترجمة الإنجليزية - هلالي-خان English - الإنجليزية
- سورة يوسف : الترجمة الإسبانية Español - الإسبانية
- سورة يوسف : الترجمة الإسبانية - المنتدى الإسلامي Español - الإسبانية
- سورة يوسف : الترجمة الإسبانية (أمريكا اللاتينية) - المنتدى الإسلامي Español - الإسبانية
- سورة يوسف : الترجمة الفارسية للمختصر في تفسير القرآن الكريم فارسی - الفارسية
- سورة يوسف : الترجمة الفارسية - دار الإسلام فارسی - الفارسية
- سورة يوسف : الترجمة الفارسية - حسين تاجي فارسی - الفارسية
- سورة يوسف : الترجمة الفرنسية - المنتدى الإسلامي Français - الفرنسية
- سورة يوسف : الترجمة الفرنسية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Français - الفرنسية
- سورة يوسف : الترجمة الغوجراتية ગુજરાતી - الغوجراتية
- سورة يوسف : الترجمة الهوساوية هَوُسَ - الهوساوية
- سورة يوسف : الترجمة الهندية हिन्दी - الهندية
- سورة يوسف : الترجمة الإندونيسية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Bahasa Indonesia - الأندونيسية
- سورة يوسف : الترجمة الإندونيسية - شركة سابق Bahasa Indonesia - الأندونيسية
- سورة يوسف : الترجمة الإندونيسية - المجمع Bahasa Indonesia - الأندونيسية
- سورة يوسف : الترجمة الإندونيسية - وزارة الشؤون الإسلامية Bahasa Indonesia - الأندونيسية
- سورة يوسف : الترجمة الإيطالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Italiano - الإيطالية
- سورة يوسف : الترجمة الإيطالية Italiano - الإيطالية
- سورة يوسف : الترجمة اليابانية 日本語 - اليابانية
- سورة يوسف : الترجمة الكازاخية - مجمع الملك فهد Қазақша - الكازاخية
- سورة يوسف : الترجمة الكازاخية - جمعية خليفة ألطاي Қазақша - الكازاخية
- سورة يوسف : الترجمة الخميرية ភាសាខ្មែរ - الخميرية
- سورة يوسف : الترجمة الكورية 한국어 - الكورية
- سورة يوسف : الترجمة الكردية Kurdî / كوردی - الكردية
- سورة يوسف : الترجمة المليبارية മലയാളം - المليبارية
- سورة يوسف : الترجمة الماراتية मराठी - الماراتية
- سورة يوسف : الترجمة النيبالية नेपाली - النيبالية
- سورة يوسف : الترجمة الأورومية Oromoo - الأورومية
- سورة يوسف : الترجمة البشتوية پښتو - البشتوية
- سورة يوسف : الترجمة البرتغالية Português - البرتغالية
- سورة يوسف : الترجمة السنهالية සිංහල - السنهالية
- سورة يوسف : الترجمة الصومالية Soomaaliga - الصومالية
- سورة يوسف : الترجمة الألبانية Shqip - الألبانية
- سورة يوسف : الترجمة التاميلية தமிழ் - التاميلية
- سورة يوسف : الترجمة التلجوية తెలుగు - التلجوية
- سورة يوسف : الترجمة الطاجيكية - عارفي Тоҷикӣ - الطاجيكية
- سورة يوسف : الترجمة الطاجيكية Тоҷикӣ - الطاجيكية
- سورة يوسف : الترجمة التايلاندية ไทย / Phasa Thai - التايلاندية
- سورة يوسف : الترجمة الفلبينية (تجالوج) للمختصر في تفسير القرآن الكريم Tagalog - الفلبينية (تجالوج)
- سورة يوسف : الترجمة الفلبينية (تجالوج) Tagalog - الفلبينية (تجالوج)
- سورة يوسف : الترجمة التركية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Türkçe - التركية
- سورة يوسف : الترجمة التركية - مركز رواد الترجمة Türkçe - التركية
- سورة يوسف : الترجمة التركية - شعبان بريتش Türkçe - التركية
- سورة يوسف : الترجمة التركية - مجمع الملك فهد Türkçe - التركية
- سورة يوسف : الترجمة الأويغورية Uyƣurqə / ئۇيغۇرچە - الأويغورية
- سورة يوسف : الترجمة الأوكرانية Українська - الأوكرانية
- سورة يوسف : الترجمة الأردية اردو - الأردية
- سورة يوسف : الترجمة الأوزبكية - علاء الدين منصور Ўзбек - الأوزبكية
- سورة يوسف : الترجمة الأوزبكية - محمد صادق Ўзбек - الأوزبكية
- سورة يوسف : الترجمة الفيتنامية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Vèneto - الفيتنامية
- سورة يوسف : الترجمة الفيتنامية Vèneto - الفيتنامية
- سورة يوسف : الترجمة اليورباوية Yorùbá - اليوروبا
- سورة يوسف : الترجمة الصينية 中文 - الصينية