الأخلاق الحميدة
কায়িস ইবন বিশর আত-তাগলিবীর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা আমার কাছে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গী ছিলেন। তিনি বলেন, সে সময় দামিশকে ইবনুল হানযালিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু নামে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবী বাস করতেন। তিনি নিঃসঙ্গ থাকতেন। খুব কমই মানুষের সাথে মিশতেন। সালাত শেষ হলে তাসবীহ-তাহলীলে মশগুল হতেন। এরপর বাড়ি ফিরে যেতেন। তিনি বলেন, একদা আমরা যখন আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট বসা ছলাম, তখন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আপনি এমন একটি কথা শুনান যা আমাদের উপকারে আসবে, অথচ আপনার ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো অভিযানে একটি বাহিনী পাঠালেন। বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পর তাদের এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর স্থানে বসে পড়লো এবং তার পাশের এক ব্যক্তিকে বললো, তুমি যদি দেখতে, আমরা যখন শত্রুবাহিনীর মুখোমুখী হই, তখন অমুক কোনো শত্রুর উপর বর্শা নিক্ষেপ করলো, আর শত্রুকে বললো, এবার সামাল দাও দেখি এই বর্শাটা, আমি তো গিফার বংশের ছেলে। এ কথার ব্যাপারে তোমার মত কী বলো তো? সে বললো, আমার মতে তার নেকী বিনষ্ট হয়েছে। আরেকজন তার এ মন্তব্য শুনে বললো, আমার মতে তার কোনো দোষ হবে না। অতঃপর তারা এ নিয়ে কথা ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। এমন কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা শুনতে পেয়ে বললেন, সুবহানাল্লাহ!, সাওয়াব পাওয়াতে এবং প্রশংসিত হওয়াতে কোনো দোষ নেই। আমি আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খুশি হতে দেখলাম। তিনি তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন, আপনি এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বারবার একথা বলতে লাগলেন। অবশেষে আমি বললাম, তিনি হয়তো তার হাঁটুদ্বয়ে চেপে বসবেন। তিনি বলেন, আরেকদিন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে অনুরোধ করলেন, আপনি এমন কিছু বলুন যা আমাদের উপকারে আসে; কিন্তু আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বলেন, ঘোড়ার জন্য খরচকারী খোলা হাতে সাদাকাহকারীর মতো যে দান করা থেকে বিরত হয় না। অতঃপর আরেক দিন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আপনি এমন একটি কথা বলুন, যা আমাদের উপকারে আসে; কিন্তু আপনার ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন: খুরাইম আল-আসাদী অত্যন্ত ভালো মানুষ। তবে তার চুলের গোছা যদি লম্বা না হতো এবং টাখনুর নিচে লুঙ্গি ঝুলিয়ে না পরিধান করতো! তাঁর এ মন্তব্য শুনে খুরাইম রাদিয়াল্লাহু আনহু সাথে সাথে একটি বড় ছুরি নিয়ে বাবরি চুল কেটে তা কানের লতি পর্যন্ত রাখেন, আর নলার অর্ধেক পর্যন্ত পরিধেয় বস্ত্র উঠিয়ে পরিধান করতে শুরু করেন। অতঃপর আরেকদিন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে অনুরোধ জানালেন, আপনি আমাদের এমন একটি কথা বলুন, যা আমাদের উপকারে আসে; কিন্তু আপনার ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “যেহেতু তোমরা তোমাদের ভাইদের নিকট যাচ্ছো, কাজেই তোমাদের বাহনগুলো ঠিকঠাক করে নাও এবং পোশাক পরিপাটি করো, তোমরা যেন সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। নিশ্চয় মহান আল্লাহ কদর্যতা ও অশ্লীলতা পছন্দ করেন না।”  
عن قيس بن بشر التغلبي، قال: أخبرني أبي - وكان جليسًا لأبي الدرداء - قال: كان بدمشق رجلٌ من أصحابِ النبيِّ -صلى الله عليه وسلم- يقال له سهل بن الحَنْظَلِيَّةِ، وكان رجلا مُتَوَحِّدًا قَلَّمَا يُجالس الناسَ، إنما هو صلاةٌ، فإذا فَرَغَ فإنما هو تسبيحٌ وتكبيرٌ حتى يأتيَ أهله، فمَرَّ بنا ونحن عند أبي الدرداءِ، فقال له أبو الدرداء: كلمةً تَنْفَعُنَا ولا تَضُرُّكَ. قال: بَعَثَ رسولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- سَرِيَّةً فَقَدِمَتْ، فجاء رجلٌ منهم فجلسَ في المجلسِ الذي يجلسُ فيه رسولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- فقال لرجلٍ إلى جَنْبِهِ: لو رأَيْتَنَا حين الْتَقَيْنَا نَحْنُ والعَدُوُّ، فحمل فلانٌ وطَعَنَ، فقال: خُذْهَا مِنِّي، وأنا الغُلامُ الغِفَارِيُّ، كيف تَرَى في قوله؟ قال: ما أُرَاهُ إلا قَدْ بَطَلَ أَجْرُهُ. فسمع بذلك آخر، فقال: ما أَرَى بذلك بَأْسًا، فَتَنَازَعَا حتى سَمِعَ رسولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- فقال: «سبحانَ اللهِ؟ لا بَأْسَ أَنْ يُؤْجَرَ ويُحْمَدَ» فرأيتُ أبا الدرداء سُرَّ بذلك، وجَعَلَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ إليهِ، ويقول: أَأَنْتَ سمعتَ ذلك مِن رسولِ اللهِ -صلى الله عليه وسلم-؟ فيقول: نعم، فما زَالَ يُعِيدُ عليه حتى إني لأقولُ لَيَبْرُكَنَّ على رُكْبَتَيْهِ، قال: فَمَرَّ بنا يومًا آخَرَ، فقال له أبو الدرداء: كلمةً تَنْفَعُنَا ولا تَضُرُّكَ، قال: قال لنا رسولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم-: «المُنْفِقُ على الخَيْلِ، كالبَاسِطِ يَدَهُ بالصدقةِ لا يَقْبِضُهَا»، ثم مَرَّ بنا يومًا آخر، فقال له أبو الدرداء: كلمةً تَنْفَعُنَا ولا تَضُرُّكَ، قال: قال رسولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم-: «نِعْمَ الرَّجُلُ خُرَيْمٌ الأَسَدِيُّ! لولا طُولُ جُمَّتِهِ وإِسْبَالُ إِزَارِهِ!» فَبَلَغَ ذلك خُرَيْمًا فَعَجِلَ، فَأَخَذَ شَفْرَةً فقطع بها جُمَّتَهُ إلى أُذُنَيْهِ، ورَفَعَ إِزَارَهُ إلى أَنْصَافِ سَاقَيْهِ. ثم مَرَّ بنا يومًا آخرَ فقال له أبو الدرداء: كلمةً تَنْفَعُنَا ولا تَضُرُّكَ، قال: سمعتُ رسولَ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يقول: «إِنَّكُمْ قَادِمُونَ على إِخْوَانِكُمْ، فَأَصْلِحُوا رِحَالَكُمْ، وأَصْلِحُوا لِبَاسَكُمْ حتى تَكُونُوا كَأَنَّكُم شَامَةٌ في الناسِ؛ فَإِنَّ اللهَ لا يحبُ الفُحْشَ ولا التَّفَحُّشَ».

شرح الحديث :


দামিশকে ইবনুল হানযালিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু নামে এক ব্যক্তি বাস করতেন। তিনি এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি একাকী জীবন পছন্দ করতেন। সালাত, তাসবীহ অতঃপর পারিবারিক বিষয় ব্যতীত কোনো কিছুতে মশগুল হতেন না। একদিন আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথীদের সাথে বসাবস্থায় ইবনুল হানযালিয়া তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন: আপনি এমন একটি কথা শোনান যা আমাদের উপকারে আসবে, আপনার কোন ক্ষতি হবে না। তখন ইবনুল হানযালিয়া বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো অভিযানে একটি ছোট বাহিনী পাঠালেন, যার সৈন্য সংখ্যা ছিল চারশর কম। কাফিররা আত্মসমর্পণ করা পর্যন্ত তার তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে রাসূলুল্লাহর কাছে আসলেন। তখন তাদের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে স্থানে বসেন সেখানে বসল। আর সে সৈন্যবাহিনী ও তার কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিলেন; তিনি একজন বর্শা নিক্ষেপকারী ব্যক্তির আলোচনা করলেন যে বর্শানিক্ষেপকারী কোনো শত্রুর উপর বর্শা নিক্ষেপ করে শত্রুকে বললো, এবার তা গ্রহণ করো। আমি তো গিফার বংশের ছেলে। সে এতে গর্ববোধ করছিল। আর যুদ্ধে শত্রুর সামনে অহংকার করাতে দোষের কিছু নেই। এ পর্যায়ে উপস্থিত কেউ বললো, তার নেকী বিনষ্ট হয়ে গেছে। কারণ সে বড়াই করছে। আরেকজন বললো, তার এতে কোনো দোষ নেই। এ নিয়ে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হল; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে এসে তাদেরকে ঝগড়ায় লিপ্ত অবস্থায় পেয়ে বললেন, সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ কীভাবে তোমরা এ বিষয়ে ঝগড়া করছ? সে প্রশংসিত হোক ও নেকিপ্রাপ্ত হোক তাতে কোনো সমস্যাই নেই। কারণ আল্লাহ এর দ্বারা তার মাঝে দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণ একত্র করে দিলেন। সে প্রশংসিত হবে। কারণ সে একজন সাহসী তীরন্দাজ আর সে সাওয়াব পাবে আল্লাহর কাছে। সুতরাং এতে দোষের তো কিছু নেই। বিশর আত-তাগলিবী বলেন, আমি আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এজন্য খুশি হতে দেখলাম; যেহেতু এই হাদীসিটির মাধ্যমে জানা গেল যে, দুনিয়াবী উপকার আখিরাতের সাওয়াব বিনষ্ট করে না। এরপর তার নিচু মাথাকে উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বারবার একথা বলতে লাগলেন। এমনকি আমি ভেবে বসলাম, তিনি হয়তো তার সামনে বিনয়ের আতিশয্যে হাঁটু গেড়ে বসে যাবেন। কেননা শিক্ষকের সামনে ছাত্রের আদব এরূপই হয়ে থাকে। আরেকদিন ইবনুল হানযালিয়্যা আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আপনি এমন কিছু বলুন যা আমাদের উপকারে আসে; কিন্তু আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি তাকে সংবাদ দিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঘোড়ার জন্য খরচ করে ঘোড়া চরানো, পানি পান করানো, খাবার খাওয়ানো, -এসব ক্ষেত্রে সে যেন তার হাতকে সাদকার জন্য খুলে দিয়েছে এবং আর বন্ধ করছে না। এখানে ঘোড়া দ্বারা উদ্দেশ্য: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য প্রস্তুত ঘোড়া। আরেকদিন ইবনুল হানাযিলা আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আপনি এমন কিছু বলুন, যা আমাদের উপকারে আসে; কিন্তু আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি তাকে সংবাদ দিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুরাইম আল-আসাদীর প্রশংসা করলেন; কিন্তু তিনি বললেন, তবে যদি তার কেশ গুচ্ছ অধিক লম্বা না হতো (এখানে কাঁধে ঝুলে পড়া লম্বা চুল উদ্দেশ্য) এবং কাপড় ঝুলিয়ে না পরতো। ঐ ব্যক্তি (খুরাইম আল-আসাদী) এ কথা শুনে দ্রুত একটি ছুরি নিয়ে তার কেশ গুচ্ছ উভয় কান বরাবর কেটে ফেললেন এবং তার কাপড়কে নলার অর্ধেক পর্যন্ত তুলে নিলেন। অতঃপর আরেকদিন ইববুল হানযালিয়া আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আপনি এমন কিছু বলুন যা আমাদের উপকারে আসে; কিন্তু আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে বলতে শুনেছি যে, যেহেতু তোমরা তোমাদের মুমিন ভাইদের নিকট যাচ্ছো, কাজেই তোমাদের বাহনগুলো ঠিকঠাক করে নাও এবং পোশাক পরিপাটি করো, শরীরের মধ্যে আঁচিল যেভাবে চোখে পড়ে মানুষদের মধ্যে তোমরাও যেন সেভাবে চোখে পড়ো। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যার পোশাক, কথা-বার্তা ও আকৃতি খারাপ হয়। তিনি আরও পছন্দ করেন না ঐ ব্যক্তিকে যে এই নিকৃষ্টতা নিজের মধ্যে ধারণ করে নেয়।  

ترجمة نص هذا الحديث متوفرة باللغات التالية