الترجمة البنغالية
ترجمة معاني القرآن الكريم للغة البنغالية ترجمها د. أبو بكر محمد زكريا، نشرها مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف بالمدينة المنورة. عام الطبعة 1436هـ.﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الر ۚ كِتَابٌ أُحْكِمَتْ آيَاتُهُ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَدُنْ حَكِيمٍ خَبِيرٍ﴾
আলিফ–লাম-রা, এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট [১] , সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত [২] প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার কাছ থেকে [৩];
﴿أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ ۚ إِنَّنِي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ﴾
যে, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করো না [১], নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা [২]।
﴿وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ ۖ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ﴾
আরো যে, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাঁরদিকে ফিরে আস [১], তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট কালের এক উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন [২] এবং তিনি প্রত্যেক গুণীজনকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দান করবেন [৩]। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর মহাদিনের শাস্তির আশংকা করি।
﴿إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
আল্লাহ্রই কাছে তোমাদের ফিরে যাওয়া এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
﴿أَلَا إِنَّهُمْ يَثْنُونَ صُدُورَهُمْ لِيَسْتَخْفُوا مِنْهُ ۚ أَلَا حِينَ يَسْتَغْشُونَ ثِيَابَهُمْ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ﴾
জেনে রাখ ! নিশ্চয় তারা তাঁর কাছে গোপন রাখার জন্য তাদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। জেনে রাখ ! তারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে তখন তারা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন [১]। অন্তরে যা আছে, নিশ্চয় তিনি তা সবিশেষে অবগত।
﴿۞ وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ﴾
আর যমীনে বিচরণকারী সবার জীবিকার [১] দায়িত্ব আল্লাহ্রই [২] এবং তিনি সেসবের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি [৩] সম্বন্ধে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে আছে [৪]।
﴿وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۗ وَلَئِنْ قُلْتَ إِنَّكُمْ مَبْعُوثُونَ مِنْ بَعْدِ الْمَوْتِ لَيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُبِينٌ﴾
আর তিনিই আসমানসমূহ ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, আর তাঁর ‘আর্শ ছিল পানির উপর [১], তোমাদের মধ্যে কে আমলে শ্রেষ্ঠ [২] তা পরীক্ষা করার জন্য [৩]। আর আপনি যদি বলেন, ‘নিশ্চয় মৃত্যুর পর তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে’, তবে কাফেররা অবশ্যই বলবে, ‘এ তো সুস্পষ্ট জাদু [৪]।’
﴿وَلَئِنْ أَخَّرْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ إِلَىٰ أُمَّةٍ مَعْدُودَةٍ لَيَقُولُنَّ مَا يَحْبِسُهُ ۗ أَلَا يَوْمَ يَأْتِيهِمْ لَيْسَ مَصْرُوفًا عَنْهُمْ وَحَاقَ بِهِمْ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
নির্দিষ্ট কালের জন্য [১] আমরা যদি তাদের থেকে শাস্তি স্থগিত রাখি তবে তারা অবশ্যই বলবে, ‘কিসে সেটা নিবারণ করেছ?’ সাবধান ! যেদিন তাদের কাছে এটা আসবে সেদিন তাদের কাছে থেকে সেটাকে নিবৃত্ত করা হবে না এবং যা নিয়ে তারা ঠাট্টা- বিদ্রূপ করে তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করবে।
﴿وَلَئِنْ أَذَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوسٌ كَفُورٌ﴾
আর যদি আমরা মানুষকে আমাদের কাছ থেক রহমত আস্বাদন করাই [১] ও পড়ে তার কাছ থেকে আমরা তা ছিনিয়ে নেই তবে তো নিশ্চয় সে হয়ে পড়ে হতাশ ও অকৃতজ্ঞ।
﴿وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي ۚ إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ﴾
আর যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমরা তাকে সুখ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলবে, আমার বিপদ-আপদ কেটে গেছে ,’ আর সে হয় উৎফুল্ল ও অহংকারী।
﴿إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَٰئِكَ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ﴾
কিন্তু যারা ধৈর্যশীল [১] ও সৎকর্মপরায়ণ তাদেরই জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
﴿فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ بَعْضَ مَا يُوحَىٰ إِلَيْكَ وَضَائِقٌ بِهِ صَدْرُكَ أَنْ يَقُولُوا لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ كَنْزٌ أَوْ جَاءَ مَعَهُ مَلَكٌ ۚ إِنَّمَا أَنْتَ نَذِيرٌ ۚ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ﴾
তবে কি আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছ তার কিছু আপনি বর্জন করবেন এবং তাতে আপনার মন সংকুচিত হবে এজন্য যে, তারা বলে, ‘তার কাছে ধন-ভাণ্ডার নামানো হয় না কেন অথবা তার সাথে ফিরিশ্তা আসে না কেন?’ আপনি তো কেবল সতর্ককারী এবং আল্লাহ্ সবকিছুর কর্মবিধায়ক [১]।
﴿أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ﴾
নাকি তারা বলে, ‘সে এটা নিজে রটনা করেছে?’ বলুন, ‘তোমরা যদি (তোমাদের দাবীতে) সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য যাকে পার (এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও [১]।’
﴿فَإِلَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا أُنْزِلَ بِعِلْمِ اللَّهِ وَأَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَهَلْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ﴾
অতঃপর যদি তারা তোমাদের আহ্বানে সাড়া না দেয় তবে জেনে রাখ, এটা তো আল্লাহ্র জ্ঞান অনুসারেই নাযিল করা হয়েছে এবং তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। অতঃপর তোমরা কি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) হবে?
﴿مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ﴾
যে কেউ দুনিয়ার জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমরা তাদের কাজের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না।
﴿أُولَٰئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ ۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
তাদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া অন্য কিছুই নেই এবং তারা যা করেছিল আখিরাতে তা নিস্ফল হবে। আর তারা যা করত তা ছিল নিরর্থক [১]।
﴿أَفَمَنْ كَانَ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّهِ وَيَتْلُوهُ شَاهِدٌ مِنْهُ وَمِنْ قَبْلِهِ كِتَابُ مُوسَىٰ إِمَامًا وَرَحْمَةً ۚ أُولَٰئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ ۚ وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الْأَحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ ۚ فَلَا تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِنْهُ ۚ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
তারা [১] কি তার সমতুল্য যে তার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত [২] এবং যারা অনুসরণ করে তাঁর প্রেরিত সাক্ষী [৩] এবং যার আগে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ? তারাই এটাতে [৪] ঈমান রাখে। অন্যান্য দলের যারা তাতে [৫] কুফরী করে, আগুনই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান [৬]। কাজেই আপনি এতে [৭] সন্দ্বিগ্ন হবেন না। এটা তো আপনার রবের প্রেরিত সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না [৮]।
﴿وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا ۚ أُولَٰئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَىٰ رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَىٰ رَبِّهِمْ ۚ أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ﴾
আর যারা আল্লাহ্র সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করে তাদের চেয়ে অধিক যালিম কে? তাদেরকে তাদের রবের সামনে উপস্থিত করা হবে এবং সাক্ষীরা বলবে, এরাই তাদের রবের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছিল [১]। সাবধান! আল্লাহ্র লা’নত যালিমদের উপর,
﴿الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ﴾
যারা আল্লাহ্র পথে বাধা দেয় এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করে; আর এরাই তো আখিরাত অস্বিকারকারী।
﴿أُولَٰئِكَ لَمْ يَكُونُوا مُعْجِزِينَ فِي الْأَرْضِ وَمَا كَانَ لَهُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ۘ يُضَاعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُ ۚ مَا كَانُوا يَسْتَطِيعُونَ السَّمْعَ وَمَا كَانُوا يُبْصِرُونَ﴾
তারা যমীনে আল্লাহ্কে অপরাগ করতে পারত না [১] এবং আল্লাহ্ ছাড়া তাদের অন্য কোন সাহায্যকারী ছিল না; তাদের শাস্তি দ্বিগুন করা হবে [২]; তাদের শুনার সামর্থ্যও ছিল না এবং তারা দেখতেও পেত না [৩]।
﴿أُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَفْتَرُونَ﴾
এরা তো নিজেদেরই ক্ষতি করল এবং তারা মিথ্যা রটনা করত তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেল [১]।
﴿لَا جَرَمَ أَنَّهُمْ فِي الْآخِرَةِ هُمُ الْأَخْسَرُونَ﴾
নিসঃন্দেহে তারাই আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
﴿إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَخْبَتُوا إِلَىٰ رَبِّهِمْ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, এবং তাদের রবের প্রতি বিনয়াবনত হয়েছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
﴿۞ مَثَلُ الْفَرِيقَيْنِ كَالْأَعْمَىٰ وَالْأَصَمِّ وَالْبَصِيرِ وَالسَّمِيعِ ۚ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ﴾
দল দুটির উপমা অন্ধ ও বধিরের এবং চক্ষুষ্মান ও শ্রবনশক্তি সম্পন্নের ন্যায়, তুলনায় এ দুটো কি সমান? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহন করবে না?
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُبِينٌ﴾
আর অবশ্যই আমরা নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘ নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী,’
﴿أَنْ لَا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ ۖ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ أَلِيمٍ﴾
‘যেন তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর ‘ইবাদত না কর ; আমি তো তোমাদের জন্য এক যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির আশংকা করি।’
﴿فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلَّا بَشَرًا مِثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرَىٰ لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ بَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِينَ﴾
অতঃপর তাঁর সম্প্রদায়ের নেতারা যারা কুফরী করেছিল, তারা বলল [১], ‘আমরা তো তোমাকে আমাদের মত একজন মানুষ ছাড়া কিছু দেখছি না; আমরা তো দেখছি, তোমার অনুসরণ করছে তারাই, যারা আমাদের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতেই অধম এবং আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না [২], বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি।’
﴿قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَآتَانِي رَحْمَةً مِنْ عِنْدِهِ فَعُمِّيَتْ عَلَيْكُمْ أَنُلْزِمُكُمُوهَا وَأَنْتُمْ لَهَا كَارِهُونَ﴾
তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করে থাকেন, অতঃপর সেটা তোমাদের কাছে গোপন রাখা হয়, আমরা কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি, যখন তোমার এটা অপছন্দ কর?’
﴿وَيَا قَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالًا ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ ۚ وَمَا أَنَا بِطَارِدِ الَّذِينَ آمَنُوا ۚ إِنَّهُمْ مُلَاقُو رَبِّهِمْ وَلَٰكِنِّي أَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُونَ﴾
‘হে আমার সম্প্রদায় ! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের কাছে কোন ধন-সম্পদ চাই না [১]। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহ্রই কাছে। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়াও আমার কাজ নয়; তারা নিশ্চিতভাবে তাদের রবের সাক্ষাত লাভ করবে [২]। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়।
﴿وَيَا قَوْمِ مَنْ يَنْصُرُنِي مِنَ اللَّهِ إِنْ طَرَدْتُهُمْ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ﴾
‘হে আমার সম্প্রদায় ! আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই, তবে আল্লাহ্র পাকড়াও থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহন করবে না?’
﴿وَلَا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ إِنِّي مَلَكٌ وَلَا أَقُولُ لِلَّذِينَ تَزْدَرِي أَعْيُنُكُمْ لَنْ يُؤْتِيَهُمُ اللَّهُ خَيْرًا ۖ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا فِي أَنْفُسِهِمْ ۖ إِنِّي إِذًا لَمِنَ الظَّالِمِينَ﴾
‘আর আমি তোমাদেরকে বলি না, ‘আমার কাছে আল্লাহ্র ধন-ভাণ্ডার আছে,’ আর না আমি গায়েব জানি [১] এবং আমি এটাও বলি না যে, আমি ফিরিশতা [২]। তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয় তাদের সম্মন্ধে আমি বলি না যে, আল্লাহ্ তাদেরকে কখনই মঙ্গল দান করবেন না; তাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ্ অধিক অবগত। (যদি এরূপ উক্তি করি) তা হলে নিশ্চয় আমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব [৩]।‘
﴿قَالُوا يَا نُوحُ قَدْ جَادَلْتَنَا فَأَكْثَرْتَ جِدَالَنَا فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
তার বলল, ‘হে নূহ ! তুমি তো আমাদের সাথে বিনন্ডা করেছ---তুমি বিতন্ডা করেছ আমাদের সাথে অতি মাত্রায়; কাজেই তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ওয়াদা তুমি করছ তা আমাদের কাছে নিয়ে আস।’
﴿قَالَ إِنَّمَا يَأْتِيكُمْ بِهِ اللَّهُ إِنْ شَاءَ وَمَا أَنْتُمْ بِمُعْجِزِينَ﴾
তিনি বললেন, ‘ইচ্ছে করলে আল্লাহ্ই তা তোমাদের কাছে উপস্থিত করবেন এবং তোমরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না।’
﴿وَلَا يَنْفَعُكُمْ نُصْحِي إِنْ أَرَدْتُ أَنْ أَنْصَحَ لَكُمْ إِنْ كَانَ اللَّهُ يُرِيدُ أَنْ يُغْوِيَكُمْ ۚ هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾
‘আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ্ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান [১]। তিনিই তোমাদের রব এবং তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
﴿أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ إِنِ افْتَرَيْتُهُ فَعَلَيَّ إِجْرَامِي وَأَنَا بَرِيءٌ مِمَّا تُجْرِمُونَ﴾
নাকি তারা বলে যে, তিনি এটা রটনা করেছেন? বলুন, ‘আমি যদি এটা রটনা করে থাকি, তবে আমিই আমার অপরাধের জন্য দায়ী হব। তোমরা যে অপরাধ করছ তা থেকে আমি দায়মুক্ত [১]।‘
﴿وَأُوحِيَ إِلَىٰ نُوحٍ أَنَّهُ لَنْ يُؤْمِنَ مِنْ قَوْمِكَ إِلَّا مَنْ قَدْ آمَنَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ﴾
আর নূহের প্রতি অহী করা হয়েছিল, ‘যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া আপনার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনো ঈমান আনবে না। কাজেই তারা যা করে তার জন্য আপনি চিন্তিত হবেন না।’
﴿وَاصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا وَلَا تُخَاطِبْنِي فِي الَّذِينَ ظَلَمُوا ۚ إِنَّهُمْ مُغْرَقُونَ﴾
‘আর আপনি আমাদের চাক্ষুষ তত্ত্বাবধানে ও আমাদের ওহী অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ করুন [১] এবং যারা যুলুম করেছে তাদের সম্পর্কে আপনি আমাকে কোন আবেদন করবেন না; তারা তো নিমজ্জিত হবে [২]।‘
﴿وَيَصْنَعُ الْفُلْكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ مَلَأٌ مِنْ قَوْمِهِ سَخِرُوا مِنْهُ ۚ قَالَ إِنْ تَسْخَرُوا مِنَّا فَإِنَّا نَسْخَرُ مِنْكُمْ كَمَا تَسْخَرُونَ﴾
আর তিনি নৌকা নির্মাণ করতে লাগলেন এবং যখনই তার সম্প্রদায়ের নেতারা তার পাশ দিয়ে যেত, তাকে নিয়ে উপহাস করত; তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি আমাদেরকে নিয়ে উপহাস কর, তবে নিশ্চয় আমরাও তোমাদেরকে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ [১];
﴿فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ مَنْ يَأْتِيهِ عَذَابٌ يُخْزِيهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌ مُقِيمٌ﴾
‘অতঃপর তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে, কার উপর আসবে এমন শাস্তি যা তাকে লাঞ্ছিত করবে, আর তার উপর আপতিত হবে স্থায়ী শাস্তি।’
﴿حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ قُلْنَا احْمِلْ فِيهَا مِنْ كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَنْ سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ وَمَنْ آمَنَ ۚ وَمَا آمَنَ مَعَهُ إِلَّا قَلِيلٌ﴾
অবশেষে যখন আমাদের আদেশ আসল এবং উনান উথলে উঠল [১]; আমরা বললাম, এতে উঠিয়ে নিন প্রত্যেক শ্রেণীর যুগলের দুটি [২], যাদের বিরুদ্ধে পূর্ব-সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা ছাড়া আপনার পরিবার-পরিজনকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। আর তার সাথে ঈমান এনেছিল কেবল অল্প কয়েকজন [৩]।
﴿۞ وَقَالَ ارْكَبُوا فِيهَا بِسْمِ اللَّهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَاهَا ۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَحِيمٌ﴾
আর তিনি বললেন, ‘তোমরা এতে আরোহন কর, আল্লাহ্র নামে এর গতি ও স্থিতি [১], আমার রব তো অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।‘
﴿وَهِيَ تَجْرِي بِهِمْ فِي مَوْجٍ كَالْجِبَالِ وَنَادَىٰ نُوحٌ ابْنَهُ وَكَانَ فِي مَعْزِلٍ يَا بُنَيَّ ارْكَبْ مَعَنَا وَلَا تَكُنْ مَعَ الْكَافِرِينَ﴾
আর পর্বত-প্রমাণ তরঙ্গের মধ্যে এটা তাদেরকে নিয়ে বয়ে চলল; নূহ তাঁর পুত্রকে, যে পৃথক ছিল, ডেকে বললেন, ‘হে আমার প্রিয় পুত্র! আমাদের সাথে আরোহন কর এবং কাফিরদের সঙ্গী হয়ো না।’
﴿قَالَ سَآوِي إِلَىٰ جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاءِ ۚ قَالَ لَا عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ إِلَّا مَنْ رَحِمَ ۚ وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِينَ﴾
সে বলল, ‘আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নেব যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে।’ তিনি বললেন, ‘আজ আল্লাহ্র হুকুম থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, তবে যাকে আল্লাহ্ দয়া করবেন সে ছাড়া।’ আর তরঙ্গ তাদের মধ্যে অন্তরায় হয়ে গেল, ফলে সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হল [১]।
﴿وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَمَاءُ أَقْلِعِي وَغِيضَ الْمَاءُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُودِيِّ ۖ وَقِيلَ بُعْدًا لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
আর বলা হল, ‘হে যমীন! তুমি তোমার পানি গ্রাস করে নাও, হে আকাশ! ক্ষান্ত হও।’ আর পানি হ্রাস করা হল এবং সিদ্ধান্ত বস্তবায়িত হল। আর নৌকা জুদী পর্বতের উপর স্থির হল [১] এবং বলা হল, ‘যালিম সম্প্রদায়ের জন্য ধ্বংস।’
﴿وَنَادَىٰ نُوحٌ رَبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابْنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنْتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ﴾
আর নূহ্ তার রবকে ডেকে বললেন, ‘হে আমার রব! নিশ্চয় আমার পুত্র আমার পরিবারভুক্ত এবং নিশ্চয় আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য [১], আর আপনি তো বিচারকের মধ্যে শ্রেষ্ট বিচারক [২]।
﴿قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ ۖ فَلَا تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۖ إِنِّي أَعِظُكَ أَنْ تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ﴾
আল্লাহ্ বললেন, ‘হে নূহ্ ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। সে অবশ্যই অসৎকর্মপরায়ণ [২]। কাজেই যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করবেন না [৩]। আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি, আপনি যেন অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হন।‘
﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ ۖ وَإِلَّا تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُنْ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾
তিনি বললেন, ‘হে আমার রব! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে যাতে আপনাকে অনুরোধ না করি, এ জন্য আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমাকে দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব [১]।‘
﴿قِيلَ يَا نُوحُ اهْبِطْ بِسَلَامٍ مِنَّا وَبَرَكَاتٍ عَلَيْكَ وَعَلَىٰ أُمَمٍ مِمَّنْ مَعَكَ ۚ وَأُمَمٌ سَنُمَتِّعُهُمْ ثُمَّ يَمَسُّهُمْ مِنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
বলা হল, ‘হে নূহ ! অবতরণ করুন আমাদের পক্ষ থেকে শান্তি ও কল্যাণসহ এবং আপনার প্রতি যে সব সম্প্রদায় আপনার সাথে রয়েছে তাদের প্রতি; আর কিছু সম্প্রদায় রয়েছে আমরা তাদেরকে জীবন উপভোগ করতে দেব, পরে আমাদের পক্ষ থেকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে [১];
﴿تِلْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهَا إِلَيْكَ ۖ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَا أَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هَٰذَا ۖ فَاصْبِرْ ۖ إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ﴾
‘এসব গায়েবের সংবাদ আমরা আপনাকে ওহী দ্বারা অবহিত করছি, যা এর আগে আপনি জানতেন না এবং আপনার সম্প্রদায়ও জানত না। কাজেই আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাকীদেরই জন্য [১]।’
﴿وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا مُفْتَرُونَ﴾
‘আর আদ জাতির কাছে তাদের ভাই হূদকে পাঠিয়েছিলাম [১] তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ‘ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তোমরা তো শুধু মিথ্যা রটনাকারী [২]।
﴿يَا قَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى الَّذِي فَطَرَنِي ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾
‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের কাছে পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক আছে তাঁরই কাছে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না [১]?
﴿وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ﴾
‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাঁর দিকেই ফিরে আস। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না [১]।’
﴿قَالُوا يَا هُودُ مَا جِئْتَنَا بِبَيِّنَةٍ وَمَا نَحْنُ بِتَارِكِي آلِهَتِنَا عَنْ قَوْلِكَ وَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ﴾
তারা বলল, ‘হে হূদ! তুমি আমাদের কাছে কোন স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসনি [১],তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগকারী নই এবং আমরা তোমার প্রতি বিশ্বাসীও নই।
﴿إِنْ نَقُولُ إِلَّا اعْتَرَاكَ بَعْضُ آلِهَتِنَا بِسُوءٍ ۗ قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ﴾
‘আমরা তো এটাই বলি, আমাদের উপাস্যদের মধ্যে কেউ তোমাকে অশুভ দ্বারা আবিষ্ট করেছে [১]।‘ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ্কে সাক্ষী করছি এবং তোমারাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর [২],
﴿مِنْ دُونِهِ ۖ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُونِ﴾
‘আল্লাহ্ ছাড়া। সুতরাং তোমরা সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর; তারপর আমাকে অবকাশ দিও না [১]।
﴿إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ ۚ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا ۚ إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ﴾
আমি তো নির্ভর করি আমার ও তোমাদের রব আল্লাহ্র উপর; এমন কোন জীব-জন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়াত্তাধীন নয় [১] ; নিশ্চয় আমার রব আছেন সরল পথে [২]।
﴿فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ مَا أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَيْكُمْ ۚ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّي قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّونَهُ شَيْئًا ۚ إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَفِيظٌ﴾
‘অতঃপর তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও আমি যা সহ তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়ছি, আমি তো তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি; এবং আমার রব তোমাদের থেকে ভিন্ন কোন সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না [১]। নিশ্চয় আমার রব সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।’
﴿وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا هُودًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَنَجَّيْنَاهُمْ مِنْ عَذَابٍ غَلِيظٍ﴾
আর যখন আমাদের নির্দেশ আসল তখন আমরা হূদ ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমাদের অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং রক্ষা করলাম তাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে [১]।
﴿وَتِلْكَ عَادٌ ۖ جَحَدُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَعَصَوْا رُسُلَهُ وَاتَّبَعُوا أَمْرَ كُلِّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ﴾
আর এ ‘আদ জাতি তাদের রবের নিদর্শন অস্বীকার করেছিল এবং অমান্য করেছিল তাঁর রাসূলগণকে [১] এবং তারা প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর নির্দেশ অনুসরণ করেছিল।
﴿وَأُتْبِعُوا فِي هَٰذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ أَلَا إِنَّ عَادًا كَفَرُوا رَبَّهُمْ ۗ أَلَا بُعْدًا لِعَادٍ قَوْمِ هُودٍ﴾
আর এ দুনিয়ায় তাদেরকে করা হয়েছিল লা’নতগ্রস্ত এবং লা’নতগ্রস্ত হবে তারা কিয়ামতের দিনেও। জেনে রাখ! ‘আদ সম্প্রদায় তো তাদের রবকে অস্বীকার করেছিল। জেনে রাখ! ধ্বংসই হচ্ছে হূদের সম্প্রদায় ‘আদের পরিণাম [১]।
﴿۞ وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ هُوَ أَنْشَأَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَاسْتَعْمَرَكُمْ فِيهَا فَاسْتَغْفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ ۚ إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُجِيبٌ﴾
আর আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম [১]। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদেরকে বসবাস করিয়েছেন [২]। কাজেই তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর আর তাঁর দিকেই ফিরে আস। নিশ্চয় আমার রব খুব কাছেই, ডাকে সাড়া প্রদানকারী [৩]।‘
﴿قَالُوا يَا صَالِحُ قَدْ كُنْتَ فِينَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هَٰذَا ۖ أَتَنْهَانَا أَنْ نَعْبُدَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا وَإِنَّنَا لَفِي شَكٍّ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ﴾
তারা বলল, ‘হে সালেহ্! এর আগে তুমি ছিলে আমাদের আশাস্থল [১]। তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করছ ‘ইবাদাত করতে তাদের, যাদের ‘ইবাদাত করত আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা?[২] নিশ্চয় আমরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছি সে বিষয়ে, যার প্রতি তুমি আমাদেরকে ডাকছ।’
﴿قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَآتَانِي مِنْهُ رَحْمَةً فَمَنْ يَنْصُرُنِي مِنَ اللَّهِ إِنْ عَصَيْتُهُ ۖ فَمَا تَزِيدُونَنِي غَيْرَ تَخْسِيرٍ﴾
তিনি বললেন, ‘ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে জানাও, আমি যদি আমার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ [১] দান করে থাকেন, তবে আল্লাহ্র শাস্তি থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে, আমি যদি তাঁর অবাধ্য হই? কাজেই তোমরা তো শুধু আমার ক্ষতিই বাড়িয়ে দিচ্ছ [২]।
﴿وَيَا قَوْمِ هَٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ قَرِيبٌ﴾
‘হে আমার সম্প্রদায়! এটা আল্লাহ্র উষ্ট্রী তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। সুতরাং এটাকে আল্লাহ্র জমিতে চরে খেতে দাও। এটাকে কোন কষ্ট দিও না, কষ্ট দিলে আশু শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে।’
﴿فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُوا فِي دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ ۖ ذَٰلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوبٍ﴾
কিন্তু তারা এটাকে হত্যা করল। তাই তিনি বললেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও। এটা এমন এক প্রতিশ্রুতি যা মিথ্যা হবার নয় [১]।’
﴿فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا صَالِحًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَمِنْ خِزْيِ يَوْمِئِذٍ ۗ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ﴾
অতঃপর যখন আমাদের নির্দেশ আসল তখন আমরা সালেহ্ ও আর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমাদের অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং রক্ষা করলাম সে দিনের লাঞ্ছনা হতে। নিশ্চয় আপনার রব, তিনি শক্তিমান, মহাপরাক্রমশালী।
﴿وَأَخَذَ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ﴾
আর যারা যুলুম করেছিল বিকট চীৎকার তাদেরকে পাকড়াও করল; ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল [১];
﴿كَأَنْ لَمْ يَغْنَوْا فِيهَا ۗ أَلَا إِنَّ ثَمُودَ كَفَرُوا رَبَّهُمْ ۗ أَلَا بُعْدًا لِثَمُودَ﴾
যেন তারা সেখানে কখনো বসবাস করেনি। জেনে রাখ! সামূদ সম্প্রদায় তো তাদের রবের সাথে কুফরী করেছিল। জেনে রাখ! ধ্বংসই হল সামূদ সম্প্রদায়ের পরিণাম।
﴿وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَىٰ قَالُوا سَلَامًا ۖ قَالَ سَلَامٌ ۖ فَمَا لَبِثَ أَنْ جَاءَ بِعِجْلٍ حَنِيذٍ﴾
আর অবশ্যই আমাদের ফিরিশ্তাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে এসেছিল [১]। তারা বলল, ‘সালাম।’ তিনিও বললেন, ‘সালাম [২]।’ অতঃপর বিলম্ব না করে তিনি এক কাবাবকৃত বাছূর নিয়ে আসলেন।
﴿فَلَمَّا رَأَىٰ أَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً ۚ قَالُوا لَا تَخَفْ إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمِ لُوطٍ﴾
অতঃপর তিনি যখন দেখলেন তাদের হাত সেটার দিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করলেন এবং তাদের সম্বন্ধে তাঁর মধ্যে ভীতি সঞ্ছার হল [১]। তাঁরা বলল , ‘ ভয় করবেন না , আমরা তো লুতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’
﴿وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ﴾
আর তাঁর স্ত্রী দাঁড়ানো ছিলেন , অতঃপর তিনি হেসে ফেললেন [১]। অতঃপর আমরা তাকে ইস্হাকের ও ইস্হাকের পরবর্তী ইয়া’কূবের সুসংবাদ দিলাম [২]।
﴿قَالَتْ يَا وَيْلَتَىٰ أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوزٌ وَهَٰذَا بَعْلِي شَيْخًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ﴾
তিনি বললেন , ‘হায়, কি আশ্চর্য! সন্তানের জননী হব আমি, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এ আমার স্বামী বৃদ্ধ! এটা অবশ্যই এক অদ্ভুত বাপার [১]।
﴿قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۖ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ ۚ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ﴾
তারা বলল, ‘আল্লাহ্র কাজে আপনি বিস্ময় বোধ করছেন ? হে নবী পরিবার ! আপনাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও কল্যাণ [১]। তিনি তো প্রশংসার যোগ্য ও অত্যন্ত সম্মানিত [২]।
﴿فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ الرَّوْعُ وَجَاءَتْهُ الْبُشْرَىٰ يُجَادِلُنَا فِي قَوْمِ لُوطٍ﴾
অতঃপর যখন ইবরাহীমের ভীতি দূরীভূত হল এবং তাঁর কাছে সুসংবাদ আসল তখন তিনি লূতের সম্প্রদায় সম্বন্ধে আমাদের সাথে বাদানুবাদ করতে লাগলেন [১]।
﴿إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَحَلِيمٌ أَوَّاهٌ مُنِيبٌ﴾
নিশ্চয় ইবরাহীম অত্যন্ত সহনশীল কমল হৃদয় [১] , সর্বদা আল্লাহ্ অভিমুখী।
﴿يَا إِبْرَاهِيمُ أَعْرِضْ عَنْ هَٰذَا ۖ إِنَّهُ قَدْ جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ ۖ وَإِنَّهُمْ آتِيهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ مَرْدُودٍ﴾
হে ইবরাহীম ! আপনি এটা থেকে বিরত হোন [১] ; নিশ্চয় আপনার রবের বিধান এসে পড়েছে; আর নিশ্চয় তাদের প্রতি আসবে শাস্তি যা অনিবার্য।
﴿وَلَمَّا جَاءَتْ رُسُلُنَا لُوطًا سِيءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَقَالَ هَٰذَا يَوْمٌ عَصِيبٌ﴾
আর যখন আমাদের প্রেরিত ফিরিশতাগণ লূতের কাছে আসল তখন তাদের আগমনে তিনি বিষণ্ণ হলেন এবং নিজেকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করলেন এবং বললেন ‘এটা বড়ই বিপদের দিন [১]।’
﴿وَجَاءَهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ ۚ قَالَ يَا قَوْمِ هَٰؤُلَاءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِي ضَيْفِي ۖ أَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَشِيدٌ﴾
আর তাঁর সম্প্রদায় তাঁর কাছে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ছুটে আসল এবং আগে থেকেই তারা কুকর্মে লিপ্ত ছিল [১]। তিনি বললেন , ‘হে আমার সম্প্রদায়! এরা আমার কন্যা , তোমাদের জন্য এরা পবিত্র [২]। কাজেই তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে হেয় করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন সুবোধ বাক্তি নেই ?’
﴿قَالُوا لَقَدْ عَلِمْتَ مَا لَنَا فِي بَنَاتِكَ مِنْ حَقٍّ وَإِنَّكَ لَتَعْلَمُ مَا نُرِيدُ﴾
তারা বলল, ‘তুমি তো জান, তোমার কন্যাদেরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই; আমরা কি চাই তা তো তুমি জানই [১]।’
﴿قَالَ لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَىٰ رُكْنٍ شَدِيدٍ﴾
তিনি বললেন, ‘তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকত অথবা যদি আমি আশ্রয় নিতে পারতাম কোন সুদৃঢ় স্তম্ভের [১] !’
﴿قَالُوا يَا لُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَنْ يَصِلُوا إِلَيْكَ ۖ فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ أَحَدٌ إِلَّا امْرَأَتَكَ ۖ إِنَّهُ مُصِيبُهَا مَا أَصَابَهُمْ ۚ إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ ۚ أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ﴾
তারা বলল, ‘হে লূত ! নিশ্চয় আমরা আপনার রব প্রেরিত ফিরিশ্তা। তারা কখনই আপনার কাছে পৌঁছাতে পারবে না [১]। কাজেই আপনি রাতের কোন এক সময়ে আপনার পরিবার বর্গ সহ বের হয়ে পড়ুন [২] এবং আপনাদের মধ্যে কেও পিছনের দিকে তাকাবে না, আপনার স্ত্রী ছাড়া [৩]। তাদের যা ঘটবে তাঁর ও তাই ঘটবে। নিশ্চয় প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত সময়। প্রভাত কি খুব কাছাকাছি নয় ?
﴿فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ مَنْضُودٍ﴾
অতঃপর যখন আমাদের আদেশ আসল তখন আমরা জনপদকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পোড়ামাটির পাথর ,
﴿مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ ۖ وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِينَ بِبَعِيدٍ﴾
যা আপনার রবের কাছে চিহ্নিত ছিল [১] আর এটা যালিমদের থেকে দূরে নয় [২]।
﴿۞ وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ وَلَا تَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ ۚ إِنِّي أَرَاكُمْ بِخَيْرٍ وَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ مُحِيطٍ﴾
আর মাদ্ইয়ানবাসীদের [১] কাছে তাদের ভাই শু’আইবকে পাঠিয়েছিলাম [২]। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই, আর মাপে ও ওজনে কম করো না; নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কল্যাণের মধ্যে দেখছি [৩] , কিন্তু আমি তোমাদের উপর আশংকা করছি এক সর্বগ্রাসী দিনের শাস্তি।
﴿وَيَا قَوْمِ أَوْفُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ﴾
‘হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা ন্যায়সঙ্গত ভাবে মাপো ও ওজন করো, লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিও না এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না [১]।
﴿بَقِيَّتُ اللَّهِ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ۚ وَمَا أَنَا عَلَيْكُمْ بِحَفِيظٍ﴾
‘যদি তোমরা মুমিন হও তবে আল্লাহ্ অনুমোদিত যা বাকী থাকবে তা তোমাদের জন্য উত্তম; আর আমি তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক নই [১]।’
﴿قَالُوا يَا شُعَيْبُ أَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ أَنْ نَتْرُكَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا أَوْ أَنْ نَفْعَلَ فِي أَمْوَالِنَا مَا نَشَاءُ ۖ إِنَّكَ لَأَنْتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ﴾
তারা বলল, ‘হে শু’আইব ! তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা যারা ‘ইবাদত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে অথবা আমরা আমাদের ধন-সম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও [১] ? তুমি তো বেশ সহিষ্ণু, সুবোধ !’
﴿قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَرَزَقَنِي مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًا ۚ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَىٰ مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ ۚ إِنْ أُرِيدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ ۚ وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ ۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ﴾
তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা ভেবে দেখেছ কি , আমি যদি আমার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি তাঁর কাছ থেকে আমাকে উৎকৃষ্ট রিযক [১] দান করে থাকেন ( তবে কি করে আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকব? ) আর আমি তোমাদেরকে যা নিষেধ করি আমি নিজে তার বিপরীত করতে ইচ্ছে করি না [২] আমি তো আমার সাধ্যমত সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে ; আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তাঁরই অভিমুখী।
﴿وَيَا قَوْمِ لَا يَجْرِمَنَّكُمْ شِقَاقِي أَنْ يُصِيبَكُمْ مِثْلُ مَا أَصَابَ قَوْمَ نُوحٍ أَوْ قَوْمَ هُودٍ أَوْ قَوْمَ صَالِحٍ ۚ وَمَا قَوْمُ لُوطٍ مِنْكُمْ بِبَعِيدٍ﴾
‘আর হে আমার সম্প্রদায় ! আমার সাথে বিরোধ যেন কিছুতেই তোমাদেরকে এমন অপরাধ না করায় যার ফলে তোমাদের উপর তার অনুরূপ বিপদ আপতিত হবে যা আপতিত হয়েছিল নূহের সম্প্রদায়ের উপর অথবা হূদের সম্প্রদায়ের উপর কিংবা সালেহের সম্প্রদায়ের উপর; আর লূতের সম্প্রদায় তো তোমাদের থেকে দূরে নয়।
﴿وَاسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ ۚ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٌ وَدُودٌ﴾
‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁর দিকে ফিরে আস; আমার রব তো পরম দয়ালু, অতি স্নেহময় [১]।’
﴿قَالُوا يَا شُعَيْبُ مَا نَفْقَهُ كَثِيرًا مِمَّا تَقُولُ وَإِنَّا لَنَرَاكَ فِينَا ضَعِيفًا ۖ وَلَوْلَا رَهْطُكَ لَرَجَمْنَاكَ ۖ وَمَا أَنْتَ عَلَيْنَا بِعَزِيزٍ﴾
তাঁরা বলল , ‘হে শু’আইব ! তুমি যা বল তার অনেক কথা আমরা বুঝি না [১] এবং আমরা তো আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বলই দেখেছি। তোমার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতাম , আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও [২]।’
﴿قَالَ يَا قَوْمِ أَرَهْطِي أَعَزُّ عَلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَاتَّخَذْتُمُوهُ وَرَاءَكُمْ ظِهْرِيًّا ۖ إِنَّ رَبِّي بِمَا تَعْمَلُونَ مُحِيطٌ﴾
তিনি বললেন , ‘হে আমার সম্প্রদায় ! তোমাদের কাছে কি আমার স্বজনবর্গ আল্লাহ্র চেয়ে বেশি শক্তিশালী ? আর তোমরা তাকে সম্পূর্ণ পিছনে ফেলে রেখেছ। তোমরা যা কর আমার রব নিশ্চয় তা পরিবেষ্টন করে আছেন।
﴿وَيَا قَوْمِ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ ۖ سَوْفَ تَعْلَمُونَ مَنْ يَأْتِيهِ عَذَابٌ يُخْزِيهِ وَمَنْ هُوَ كَاذِبٌ ۖ وَارْتَقِبُوا إِنِّي مَعَكُمْ رَقِيبٌ﴾
‘আর হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে কাজ করতে থাক, আমিও আমার কাজ করছি। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি এবং কে মিথ্যাবাদী। আর তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি।’
﴿وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ﴾
আর যখন আমাদের নির্দেশ আসল তখন আমরা, শু’আইব ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমাদের অনুগ্রহে রক্ষা করেছিলাম। আর যারা যুলুম করেছিল বিকট চিৎকার তাদেরকে আঘাত করল , ফলে তাঁরা নিজ নিজ ঘরে নতজানু অবস্থায় পড়ে রইল [১]।
﴿كَأَنْ لَمْ يَغْنَوْا فِيهَا ۗ أَلَا بُعْدًا لِمَدْيَنَ كَمَا بَعِدَتْ ثَمُودُ﴾
যেন তারা সেখানে কখনো বসবাস করেনি। জেনে রাখ ! ধংসই ছিল মাদ্ইয়ানবাসীর পরিনাম, যেভাবে ধংস হয়েছিল সামূদ সম্প্রদায়।
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ﴾
আর অবশ্যই আমারা মূসাকে আমাদের নির্দেশনাবলি ও প্রমাণসহ পাঠিয়েছিলাম,
﴿إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاتَّبَعُوا أَمْرَ فِرْعَوْنَ ۖ وَمَا أَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيدٍ﴾
ফির’আউন ও তার নেতৃবৃন্দের কাছে। কিন্তু নেতৃবৃন্দ ফির’আউনের কার্যকলাপের অনুসরণ করছিল। আর ফির’আউনের কার্যকলাপ সঠিক ছিল না।
﴿يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ ۖ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ﴾
সে কিয়ামতের দিনে তার সম্প্রদায়ের সামনে থাকবে [১]। অতঃপর সে তাদেরকে আগুনে উপনীত করবে। এর যেখানে তারা উপনীত হবে তা উপনীত হওয়ার কত নিকৃষ্ট স্থান!
﴿وَأُتْبِعُوا فِي هَٰذِهِ لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ بِئْسَ الرِّفْدُ الْمَرْفُودُ﴾
আর অভিশাপ তাদের পেছনে লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল এ দুনিয়ায় এবং কিয়ামতের দিনেও। কতই না নিকৃষ্ট সে পুরুস্কার যা তাদেরকে দেয়া হবে !
﴿ذَٰلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْقُرَىٰ نَقُصُّهُ عَلَيْكَ ۖ مِنْهَا قَائِمٌ وَحَصِيدٌ﴾
এগুলো জনপদসমুহের কিছু সংবাদ যা আমরা আপনার কাছে বর্ণনা করছি। এ গুলোর মধ্যে কিছু এখনো বিদ্যমান এবং কিছু নির্মূল হয়েছে।
﴿وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَٰكِنْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ۖ فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمْ آلِهَتُهُمُ الَّتِي يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ لَمَّا جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ ۖ وَمَا زَادُوهُمْ غَيْرَ تَتْبِيبٍ﴾
আর আমরা তাদের প্রতি যুলুম করিনি কিন্তু তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। অতঃপর যখন আপনার রবের নির্দেশ আসল, তখন আল্লাহ্ ছাড়া তাঁরা যে ইলাহসমূহের ইবাদত করত তারা তাদের কোন কাজে আসল না। আর তারা ধবস ছাড়া তাদের অন্য কিছুই বৃদ্ধি করল না।
﴿وَكَذَٰلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَىٰ وَهِيَ ظَالِمَةٌ ۚ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ﴾
এরূপই আপনার রবের পাকড়াও ! যখন তিনি পাকড়াও করেন অত্যাচারী জনপদসমূহকে। নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও যন্ত্রণাদায়ক, কঠিন [১]।
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِمَنْ خَافَ عَذَابَ الْآخِرَةِ ۚ ذَٰلِكَ يَوْمٌ مَجْمُوعٌ لَهُ النَّاسُ وَذَٰلِكَ يَوْمٌ مَشْهُودٌ﴾
নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন তার জন্য যে আখিরাতের শাস্তিকে ভয় করে [১]। সেটি এমন একদিন, যেদিন সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে ; আর সেটি এমন এক দিন যেদিন সবাইকে উপস্থিত করা হবে [২]।
﴿وَمَا نُؤَخِّرُهُ إِلَّا لِأَجَلٍ مَعْدُودٍ﴾
আর আমরা তো কেবল নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যই সেটা বিলম্বিত করছি।
﴿يَوْمَ يَأْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَسَعِيدٌ﴾
যখন সেদিন আসবে তখন আল্লাহ্র অনুমতি ছাড়া কেও কথা বলতে পারবে না [১]; অতঃপর তাদের মধ্যে কেও হবে হতভাগ্য আর কেও হবে সৌভাগ্যবান [২]।
﴿فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُوا فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ﴾
অতঃপর যারা হবে হতভাগ্য তারা থাকবে আগুনে এবং সেখানে তাদের থাকবে চিৎকার ও আর্তনাদ,
﴿خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ﴾
সেখানে তারা স্থায়ী হবে [১] যতদিন আকাশমণ্ডলী ও যমীনে বিদ্যমান থাকবে [২] যদি না আপনার রব অনুরূপ ইচ্ছে করেন [৩] ; নিশ্চয় আপনার রব তাই করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন।
﴿۞ وَأَمَّا الَّذِينَ سُعِدُوا فَفِي الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ ۖ عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذٍ﴾
আর যারা ভাগ্যবান হয়েছে তাঁরা থাকবে জান্নাতে, সেখানে তাঁরা স্থায়ি হবে ,যতদিন আকাশমণ্ডলী ও যমীন বিদ্যমান থাকবে, যদি না আপনার রব অন্যরূপ ইচ্ছে করেন [১]; এটা এক নিরবিচ্ছিন্ন পুরস্কার।
﴿فَلَا تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِمَّا يَعْبُدُ هَٰؤُلَاءِ ۚ مَا يَعْبُدُونَ إِلَّا كَمَا يَعْبُدُ آبَاؤُهُمْ مِنْ قَبْلُ ۚ وَإِنَّا لَمُوَفُّوهُمْ نَصِيبَهُمْ غَيْرَ مَنْقُوصٍ﴾
কাজেই তারা যাদের ইবাদত করে তাদের সম্বন্ধে সংশয়ে থাকবেন না, আগে তাদের পিতৃপুরুষেরা যেভাবে ‘ইবাদত করত তারাও তাদেরই মত ‘ইবাদত করে [১]। আর নিশ্চয় আমরা তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পুরোপুরি দেব---কিছুমাত্র কম করবো না।
﴿وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَاخْتُلِفَ فِيهِ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ﴾
আর অবশ্যই আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর এতে মতভেদ ঘটেছিল। আর আপনার রবের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের মিমাংসা তো হয়েই যেত [১]। আর নিশ্চয় তারা এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিপতিত [২]।
﴿وَإِنَّ كُلًّا لَمَّا لَيُوَفِّيَنَّهُمْ رَبُّكَ أَعْمَالَهُمْ ۚ إِنَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ خَبِيرٌ﴾
আর নিশ্চয় আপনার রব তাদের প্রত্যেককে তার কর্মফল পুরোপুরি দবেন। তারা যা করে তিনি তো সে বিষয়ে সবিশেষ অবিহত ;
﴿فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا ۚ إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ﴾
কাজেই আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন তাতে অবিচল থাকুন এবং আপনার সাথে যারা তাওবা করেছে তারাও [১] ; এবং তোমরা সীমালংঘন কর না [২] তোমরা যা কর নিশ্চয় তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।
﴿وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ﴾
আর যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না ; পড়লে আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে [১] এ অবস্থায় আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। তারপর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।
﴿وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ﴾
আর আপনি সালাত কায়েম করুন [১] দিনের দু প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংসে [২]। নিশ্চয় সৎকাজ অসৎ কাজকে মিটিয়ে দেয় [৩]। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা [৪] এক উপদেশ।
﴿وَاصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ﴾
আর আপনি ধৈর্য ধারন করুন, কারন নিশ্চয় আল্লাহ্ ইহসানকারীদের প্রতিদান নষ্ট করেন না [১]।
﴿فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِنْ قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِمَّنْ أَنْجَيْنَا مِنْهُمْ ۗ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ﴾
অতএব তোমাদের পূর্বের প্রজন্মসমুহের মধ্যে এমন প্রজ্ঞাবন কেন হয়নি, যারা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি থেকে নিষেধ করত? অল্প সংখ্যক ছাড়া, যাদেরকে আমরা তাদের মধ্যে নাজাত দিয়েছিলাম [১]। আর যারা যুলুম করেছে তারা বিলাসিতার পেছনে পড়ে ছিল, আর তারা ছিল অপরাধী।
﴿وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَىٰ بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ﴾
আর আপনারা রব এরূপ নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে জনপদ ধ্বংস করবেন অথচ তাঁর অধিবাসীরা সংশোধনকারী [১]।
﴿وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً ۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ﴾
আর আপনার রব ইচ্ছে করলে সমস্ত মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তারা পরস্পর মতবিরোধকারীই রয়ে গেছে [১]।
﴿إِلَّا مَنْ رَحِمَ رَبُّكَ ۚ وَلِذَٰلِكَ خَلَقَهُمْ ۗ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ﴾
তবে তারা নয়, যাদেরকে আপনার রব দয়া করেছে এবং তিনি তাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করেছেন। আর ‘আমি জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবই’, আপনার রবের এ কথা পূর্ণ হয়েছে [১]
﴿وَكُلًّا نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ ۚ وَجَاءَكَ فِي هَٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ﴾
আর রাসূলদের ঐ সব বৃত্তান্ত আমরা আপনার কাছে বর্ণনা করেছি , যা দ্বারা আমরা আপনার চিত্তকে দৃঢ় করি, এর মাধ্যমে আপনার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের কাছে এসেছে উপদেশ ও স্মরণ।
﴿وَقُلْ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنَّا عَامِلُونَ﴾
আর যারা ঈমান আনে না তাদেরকে বলুন, ‘তোমরা স্ব স্ব অবস্থানে কাজ করতে থাক, আমরাও কাজ করছি।
﴿وَانْتَظِرُوا إِنَّا مُنْتَظِرُونَ﴾
‘এবং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষা করছি। ’
﴿وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ ۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ﴾
আসমানসমুহ ও যমীনের গায়েব আল্লাহরই মালিকানায় এবং তাঁরই কাছে সবকিছু প্রত্যাবর্তন করানো হবে। কাজেই আপনি তাঁর ইবাদত করুন এবং তাঁর উপর নির্ভর করুন। আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আপনার রব গাফিল নন [১]।
الترجمات والتفاسير لهذه السورة:
- سورة هود : الترجمة الأمهرية አማርኛ - الأمهرية
- سورة هود : اللغة العربية - المختصر في تفسير القرآن الكريم العربية - العربية
- سورة هود : اللغة العربية - التفسير الميسر العربية - العربية
- سورة هود : اللغة العربية - معاني الكلمات العربية - العربية
- سورة هود : الترجمة الأسامية অসমীয়া - الأسامية
- سورة هود : الترجمة الأذرية Azərbaycanca / آذربايجان - الأذرية
- سورة هود : الترجمة البنغالية বাংলা - البنغالية
- سورة هود : الترجمة البوسنية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Bosanski - البوسنية
- سورة هود : الترجمة البوسنية - كوركت Bosanski - البوسنية
- سورة هود : الترجمة البوسنية - ميهانوفيتش Bosanski - البوسنية
- سورة هود : الترجمة الألمانية - بوبنهايم Deutsch - الألمانية
- سورة هود : الترجمة الألمانية - أبو رضا Deutsch - الألمانية
- سورة هود : الترجمة الإنجليزية - صحيح انترناشونال English - الإنجليزية
- سورة هود : الترجمة الإنجليزية - هلالي-خان English - الإنجليزية
- سورة هود : الترجمة الإسبانية Español - الإسبانية
- سورة هود : الترجمة الإسبانية - المنتدى الإسلامي Español - الإسبانية
- سورة هود : الترجمة الإسبانية (أمريكا اللاتينية) - المنتدى الإسلامي Español - الإسبانية
- سورة هود : الترجمة الفارسية للمختصر في تفسير القرآن الكريم فارسی - الفارسية
- سورة هود : الترجمة الفارسية - دار الإسلام فارسی - الفارسية
- سورة هود : الترجمة الفارسية - حسين تاجي فارسی - الفارسية
- سورة هود : الترجمة الفرنسية - المنتدى الإسلامي Français - الفرنسية
- سورة هود : الترجمة الفرنسية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Français - الفرنسية
- سورة هود : الترجمة الغوجراتية ગુજરાતી - الغوجراتية
- سورة هود : الترجمة الهوساوية هَوُسَ - الهوساوية
- سورة هود : الترجمة الهندية हिन्दी - الهندية
- سورة هود : الترجمة الإندونيسية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Bahasa Indonesia - الأندونيسية
- سورة هود : الترجمة الإندونيسية - شركة سابق Bahasa Indonesia - الأندونيسية
- سورة هود : الترجمة الإندونيسية - المجمع Bahasa Indonesia - الأندونيسية
- سورة هود : الترجمة الإندونيسية - وزارة الشؤون الإسلامية Bahasa Indonesia - الأندونيسية
- سورة هود : الترجمة الإيطالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Italiano - الإيطالية
- سورة هود : الترجمة الإيطالية Italiano - الإيطالية
- سورة هود : الترجمة اليابانية 日本語 - اليابانية
- سورة هود : الترجمة الكازاخية - مجمع الملك فهد Қазақша - الكازاخية
- سورة هود : الترجمة الكازاخية - جمعية خليفة ألطاي Қазақша - الكازاخية
- سورة هود : الترجمة الخميرية ភាសាខ្មែរ - الخميرية
- سورة هود : الترجمة الكورية 한국어 - الكورية
- سورة هود : الترجمة الكردية Kurdî / كوردی - الكردية
- سورة هود : الترجمة المليبارية മലയാളം - المليبارية
- سورة هود : الترجمة الماراتية मराठी - الماراتية
- سورة هود : الترجمة النيبالية नेपाली - النيبالية
- سورة هود : الترجمة الأورومية Oromoo - الأورومية
- سورة هود : الترجمة البشتوية پښتو - البشتوية
- سورة هود : الترجمة البرتغالية Português - البرتغالية
- سورة هود : الترجمة السنهالية සිංහල - السنهالية
- سورة هود : الترجمة الصومالية Soomaaliga - الصومالية
- سورة هود : الترجمة الألبانية Shqip - الألبانية
- سورة هود : الترجمة التاميلية தமிழ் - التاميلية
- سورة هود : الترجمة التلجوية తెలుగు - التلجوية
- سورة هود : الترجمة الطاجيكية - عارفي Тоҷикӣ - الطاجيكية
- سورة هود : الترجمة الطاجيكية Тоҷикӣ - الطاجيكية
- سورة هود : الترجمة التايلاندية ไทย / Phasa Thai - التايلاندية
- سورة هود : الترجمة الفلبينية (تجالوج) للمختصر في تفسير القرآن الكريم Tagalog - الفلبينية (تجالوج)
- سورة هود : الترجمة الفلبينية (تجالوج) Tagalog - الفلبينية (تجالوج)
- سورة هود : الترجمة التركية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Türkçe - التركية
- سورة هود : الترجمة التركية - مركز رواد الترجمة Türkçe - التركية
- سورة هود : الترجمة التركية - شعبان بريتش Türkçe - التركية
- سورة هود : الترجمة التركية - مجمع الملك فهد Türkçe - التركية
- سورة هود : الترجمة الأويغورية Uyƣurqə / ئۇيغۇرچە - الأويغورية
- سورة هود : الترجمة الأوكرانية Українська - الأوكرانية
- سورة هود : الترجمة الأردية اردو - الأردية
- سورة هود : الترجمة الأوزبكية - علاء الدين منصور Ўзбек - الأوزبكية
- سورة هود : الترجمة الأوزبكية - محمد صادق Ўзбек - الأوزبكية
- سورة هود : الترجمة الفيتنامية للمختصر في تفسير القرآن الكريم Vèneto - الفيتنامية
- سورة هود : الترجمة الفيتنامية Vèneto - الفيتنامية
- سورة هود : الترجمة اليورباوية Yorùbá - اليوروبا
- سورة هود : الترجمة الصينية 中文 - الصينية